যুবদল ছেড়ে যুবলীগের ঢাল, দখল-চাঁদাবাজি চলছেই বাদল-বাহারের

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় একসময় পাহাড় কাটা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখল বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের নেতৃত্ব দিতেন যুবদলের পেটকাটা বাবর। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পরের বছর তিনি যোগ দেন যুবলীগে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা এসে গঠন করে র‌্যাব। র‌্যাব গঠনের দেড় মাসের মাথায় কথিত ক্রসফায়ারে মারা যান বাবর। এরপর বাবরের অনুসারীরা চলে যান আড়ালে।

বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা শেষে ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বছরও তারা ছিলেন সাধারণ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারো দৃশ্যপটে আসেন বাবরের অনুসারীরা। এবার নেতৃত্বে বাহার উদ্দিন প্রকাশ মাটি বাহার, শামসুদ্দিন বাদল ও পুলিশের একসময়ের সোর্স আনোয়ার হোসেন।

বায়েজিদ থানার বাংলাবাজার এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, বাহার বাহিনীর হাতে জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। তাদের অনুমতি ছাড়া কেউ বাড়িঘর তৈরি করতে পারে না, ব্যবসা বাণিজ্যও করতে পারে না। আবার জাল খতিয়ান তৈরি করে জায়গার মালিককে হয়রানিও করছে এই চক্রটি। পরে বিচার যায় বাদল, বাহার কিংবা আনোয়ারের কাছে। তারা বসে মোটা অংকের বিনিময়ে সমস্যার সমাধান করেন— এমন অভিযোগ অহরহ।

সরকারি পাহাড় কেটে বিক্রি তো আছেই, আবার ব্যক্তিমালিকানার জায়গা নিজেরা দখল করার পাশাপাশি অন্যদের দখলে এনে দিতে ভাড়াও খাটেন এরা। এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, মাদকের বাণিজ্যের পাশাপাশি এলাকায় জুয়ার আসর বসান এই সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেটের ভয়ে রাতদিন তটস্থ থাকেন পশ্চিম বায়েজিদের চন্দ্রনগর, বাংলা বাজার, চৌধুরী নগর, শহীদ নগর, নীলাচল, গ্রিনভ্যালি, ডেবার পাড়, গুলশান আবাসিক এলাকা, বনবিথী আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের মতে তিনজনই এখানকার ‘রাজা-বাদশা’। তাদের হুকুমেই দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এখানে এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হয়, কখনও কখনও রাতেও তারা পাহাড় কাটে।

সরকারি পাহাড় কেটে এই এলাকায় কথিত বাস্তুহারা সমিতি গঠনের নামে প্রায় ৫ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে নেয় এই সিণ্ডিকেট। সমিতির সদস্যদের প্লট দেওয়ার নামে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন এই তিনজন। টাকা ফেরত চাইলে জানে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এই তিনজন পলাতক থাকলে তাদের হয়ে বাদলের ভাই লিটন, সোর্স আনোয়ারের ভাই আবু, বোন জামাই মঈনুদ্দিন, ভাগিনা বাবলু, শুক্কুর, বোমা আলম, মিঠু ও শাহজাহান কাজ করে বলে জানা গেছে।

এ চক্রের রাজনৈতিক আসল রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ১৯৯৭ সালে বাবর যুবলীগে যোগ দেওয়ার আগে তার সাথে এরাও মিছিল মিটিংয়ে আসতো। ১৯৯৭ সাল থেকে ওরা যুবলীগের সাথেই আছে। যুবলীগের মূলধারায় না এলেও সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ওই এলাকায় পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে সব অপর্কমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওই একই চক্র।

চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাহার, বাদল, আনোয়ারদের নাম আমরা পত্রপত্রিকায় পেয়েছি। যুবলীগের নাম ব্যবহার করলেও ওরা আমাদের সংগঠনের কোন পদে নেই।’

বায়েজিদ থানা সূত্রে জানা যায়, বাহার, বাদল, আনোয়ার— এই তিনজনের বিরুদ্ধে শুধু বায়েজিদ থানাতেই আছে ২০টি মামলা। বাহারের বিরুদ্ধে ৭, বাদলের বিরুদ্ধে ৮ এবং সোর্স আনোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে ৫ মামলা। বাহার উদ্দিন প্রকাশ মাটি বাহার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। শামসুদ্দিন বাদল স্থানীয় আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। সোর্স আনোয়ার বি-বাড়িয়ার আবদুর রউফের ছেলে।

২০ মামলায় তিন আসামির ব্যাপারে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলাগুলোতে তারা জামিন নিয়ে তারা আত্মগোপনে আছে। আমরা তাদের বিষয়ে সতর্ক আছি।’

এ ব্যাপারে বাহার উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। আমি এসবে নেই। আমি এখন ঢাকায়। চট্টগ্রাম আসলে বিস্তারিত কথা বলবো।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!