যুবকের খুনি ২ লাখে রেহাই পেল ৩ মেম্বারের সালিশে, এখন স্বজনদের ওপরও হামলা

আগেও বাবুল মাঝির হাতে খুন হয়েছিল এক গৃহবধূ

পূর্বশত্রুতার জেরে একজনকে হত্যার পর তা ধামাচাপা দিতে আপোসরফা করা হয় ২ লাখ টাকায়। ১ লাখ নগদে, ১ লাখ চেকে। সে ঘটনা ফাঁস করে দেয়ায় নিহতের স্বজনের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর এলাকার আব্দুর সবুর (১৮) নামের এক যুবককে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নিয়ে খুন করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারী স্থানীয় ৩ ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে নিহতের পিতা মো. ইব্রাহিমকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা করতে বাধা দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

এ ঘটনা ফাঁস করে দেয়ায় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাতে নিহত আব্দুর সবুরের মামাতো ভাই মো. দিদার (২৫) ও বোন মর্জিয়া বেগমের (২৩) ওপর উল্টো হামলা চালিয়েছে খুনি ও তার দলবল। আহতরা দুইজনই বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই নিয়ে এলাকায় নিহতদের পরিবারে আতংক বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুনের বিষয়টি নীরবেই ধামাচাপা দিয়েছিল স্থানীয় ৩ মেম্বার ও প্রভাবশালী কয়েকজন। খুনের বিষয়টি প্রকাশ করে দিলে নিহতের মামাতো ভাই মো. দিদার ও তার বোন মর্জিয়া বেগমের ওপর হামলা চালায় হত্যাকারী ও তার দলবল। হামলার পর থেকে লোমহর্ষক হত্যার ঘটনা উন্মোচিত হতে থাকে।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত হত্যাাকারী একই গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে মো. বাবুল মাঝি। তার বিরুদ্ধে ১৫ বছর আগেও একই পাড়ার গৃহবধূ ছুরা খাতুনকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ছুরা খাতুনের ছেলে মো. আলম বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছিল। চলমান ওই হত্যা মামলার আসামি মো. বাবুল মাঝি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং বোটের জেলে আমির হামজা, আরমান, সাদ্দাম জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাতে গভীর সাগরের ‘লাশের দ্বার’ নামক স্থানে হঠাৎ পূর্ব শত্রুতার ঘটনার রেশ টেনে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন বোটের মাঝি মো. বাবুল ও কর্মচারী আব্দুর সবুর। এক পর্যায়ে আব্দুর সবুরকে মাঝি মো. বাবুল সাগরে জাল আটকে গেছে বলে ফিশিং বোট থেকে গভীর সাগরের ঠাণ্ডা পানিতে নামিয়ে দেয়। পরে মাঝি মো. বাবুল, আব্দুর সবুরকে সাগরে নানাভাবে নির্যাতন করে মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর ফিশিং বোট ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেয়।

আমির হামজা, আরমান ও সাদ্দাম বলেন, আমরা লাশটা অন্ততঃ ফিশিং বোটে তোলার আকুতি করলেও বাবুল লাশটি তুলতে দেয়নি। বাবুল মাঝি হুমকি ধমকি দিয়ে বলেছে মানুষ খুন করলে কোন বিচার হয় না। চুপ থাক। এরপর দিন ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার বাঁশখালীতে ফিরে আমরা নিহত আব্দুর সবুরের বাবা মো. ইব্রাহিমকে ঘটনা জানায়। কিন্তু এর আগেই খুনি মো. বাবুল মিয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালীদের নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন।

শালিসী বৈঠকে ছিলেন শীলকূপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আকবর বাহাদুর, ইউপি সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন, ইউপি সদস্য মো. ইউছুফ ও বহদ্দার আব্দুর রশিদ। বৈঠকটি হয় ৩১ডিসেম্বর শুক্রবার জালিয়াখালী নতুন বাজারের কালু সওদাগরের চা দোকানে। ওই বাজারের ইজারাদার আবু তাহের এবং আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার হোসেন বলেন, ওই বৈঠকের পাশে আমরাও ছিলাম। হত্যার বিচার মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে সমাধান করে দেয়ার চাপ সৃষ্টি করা ঠিক হয়নি। খুনির ন্যায় বিচার হওয়া উচিত।

নিহত আব্দুর সবুরের বাবা মো. ইব্রাহিম মাঝি বলেন, আমি ও আমার ছেলের বেতনও বকেয়া রয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ওই ৭০ হাজার টাকা না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে ২ লাখ টাকায় হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আমার ভাগিনা মো. দিদার ও ভাগ্নি মর্জিয়া বেগমকে পিটিয়ে আহত করেছে। খুনি ও প্রভাবশালীদের আতংকে আমার ছেলের মৃত্যুর ৮ দিনেও আমার ছেলের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারিনি। খুনির ন্যায় বিচার না হলে আমার পরিবারের ওপরও জীবনশংকা রয়েছে।

শালিসি বৈঠকের আদেশ দাতাদের মধ্যে একজন শীলকূপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আকবর বাহাদুর। তিনি বলেন, আমি ওখানে চা খেতে গিয়েছিলাম। শালিসি বৈঠকে ছিলাম না। অন্য দুই মেম্বার মো. নিজাম উদ্দিন ও মো. ইউছুপ ছিলো।

বৈঠকে উপস্থিত বাকি দুই মেম্বারের সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, নিহতদের পরিবার থেকে কোন ধরনের অভিযোগ দেয়নি থানায়। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!