রোববার (২৬ মার্চ) বেলা ১১টা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ক্যাথলিক ইউনিভাসিটি অব আমেরিকার ক্রো আর্কিটেকচারাল সেন্টার তখন যেন লাখো শহীদের হাতছানিতে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। যেখানে আয়োজন করা হয়েছিল হাজার বছরের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনী।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশি অতিথি ও নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সবার চোখে-মুখে যেন ব্যাকুলতা— ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা।’
ভিড় ঠেলে ঐতিহ্যিক কারুকাজ শোভিত গ্যালারিতে থরেথরে সাজানো রয়েছে ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিজাগানিয়া যুদ্ধকালীন পোস্টার, ওই সময়কার পত্রপত্রিকার কপি, ৭১ সালের আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশ গানের এলপি, ঐতিহাসিক লাল সবুজ পতাকা, স্ত্রীর কাছে বন্দি মুক্তিযোদ্ধার লেখা চিঠি, লাল হরফে ছাপানো দৈনিক আজাদী পত্রিকার কপি (টেলিগ্রাফ)। সে সময়ের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংগৃহীত অমূল্য বইও এতে প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও আমেরিকার নানা রাজ্য থেকে আসা অনেক বাংলাদেশি শহীদ পরিবারের স্বাক্ষরসমৃদ্ধ নথিপত্রও এতে শোভা পায়।
প্রদর্শনীর অপরপ্রান্তে অডিটোরিয়ামে অধ্যাপক ড. আদনান মোর্শেদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, এসোসিয়েটেড প্রেসের সাবেক সাংবাদিক আর্নল্ড জেইটলিন, ইকবাল বাহার চৌধুরী, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা, কায়কাউস আহমাদ এবং আনিস আহমেদ।
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্ততা দেন আয়েশা কাশেম, আলাউয়ি মাসুদ, আরাফ রহমান। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন আহসান আহমাদ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে বন্দি থাকা অবস্থায় তার মাকে লেখা মুক্তিযোদ্ধা বাবা মহিউদ্দিন আহমেদের চিঠি পড়ে শোনান কন্যা সাদিয়া আহমেদ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধ শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের সংগ্রাম ছিল না. এটি ছিল বৈশ্বিক স্নায়ুযুদ্ধের অন্যতম ঘটনা। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের রাজনৈতিক যুদ্ধের নাটক মঞ্চে বাঙালির সংগ্রাম পেয়েছিলো নতুন মাত্রা। ৫২ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে, অপারেশন সার্চলাইট নামে এক ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়েছিল বাঙালিরা। শুরু হয় বাঙালির স্বাধীনতার যুদ্ধ। স্বাধিকার অর্জনের সেই সংগ্রামের নতুন প্রজন্মের সচেনতা তৈরি করার লক্ষ্যে এই প্রদর্শনী সত্যি ব্যতিক্রমী।