যা খুশি তাই করছেন সিডিএ গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক, খুঁটির জোর ছালাম

চট্টগ্রামে সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. গাজীউল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুচ ছালামের সহায়তায় তিনি এসব অনিয়ম করেছেন—এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনাধীন সিডিএ গার্লস অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. গাজীউল হক যোগদান করেন ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই। সেই থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির সমর্থনে তিনি নানা অনিয়ম ও ক্ষমতায় অপব্যবহার করে চলেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলেই তিনি নানাভাবে হয়রানি করেন। এমনকি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে প্রতিবাদ করায়। এমন নজিরও রয়েছে। ফলে কেউ প্রধান শিক্ষকের শত অন্যায়েও মুখ খোলার সাহস পান না। বরং তার অন্যায় ও অনিয়মতান্ত্রিক আবদার রক্ষা করে চলেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, এসব বিষয়ে সম্প্রতি আমি অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মকারী ও স্বেচ্ছাচারীদের রেহাই দেওয়া হবে না।

তবে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের রোষানলের শিকার হয়েছেন সহকারী শিক্ষক শাহীন সুলতানা। প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মে সহায়তা ও সাই না দেওয়ায় তাকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পায়তারা করছেন তিনি। এরাই অংশ হিসেবে গত ২৩ জুন প্রধান শিক্ষক পরিচালনা কমিটির সভাপতির আবদুচ ছালামের অনুমোদন নিয়ে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। অথচ নিয়মানুযায়ী তখন ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। কারণ সিডিএ পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদাধিকার বলে সভাপতি হচ্ছেন সিডিএ চেয়ারম্যান। সেই হিসেবে প্রধান শিক্ষক তার মতবিরোধীকে ঘায়েল করার জন্য সাবেক চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে এসব করেছেন। বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত অন্যান্য সুবিধা থেকে ও বঞ্চিত করা হচ্ছে শাহীন সুলতানাকে—এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিষয়গুলো স্বীকার করেছেন সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, কারও কারও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বঞ্চিত শিক্ষকরাও হারিয়ে ফেলছেন মনোযোগ। তাই এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষক নিয়ম না মেনে অস্থায়ী দুই শিক্ষককে স্থায়ী করেছেন। আবদুচ ছালামের গাড়িচালক জলিলের স্ত্রী মাহিনুর বেগম ও শালী সুরমা বেগমকে চাকরি দিয়েছেন। তিনজন জুনিয়র শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেন। নিয়মানুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণের এক বছর পর ইনক্রিমেন্ট পান। কিন্তু তিনি যোগদানের পরের বছর থেকেই এ সুবিধা নিয়ে থাকেন। তিনি নিজের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির পঞ্চম সভায় কার্যবিবরণী পরিবর্তনের অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

সহকারী শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা বলেন, অকারণে আমার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী কাজে সমর্থন না দেওয়ায় তিনি এমনটি করেছেন। ভুল বুঝিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যানকে। যদি আমার কোনো অন্যায় থেকেও থাকে নিয়মানুযায়ী শোকজ করার কথা। তাও করা হয়নি। আমাকে অব্যাহতির দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মো. গাজীউল হক। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যা কিছু করা হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে। পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আমি কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এনটিআরসিএ’র (নন গভর্মেন্ট টিচার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড সার্টিফিকেশন অথরিটি) নিয়মানুযায়ী।

শাহীন সুলতানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে তাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সার্বিক বিবেচনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহিদা ইসলাম বলেন, ন্যায় ও নিয়মের বাইরে গিয়ে শিক্ষা বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!