যাত্রী জিম্মি করে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ফ্রি ট্রলি-হুইলচেয়ার কুলিদের দখলে
ট্রলি-হুইলচেয়ার তালা দিয়ে রাখা হয়
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে মালামাল ও রোগী নিয়ে প্ল্যাটফর্মে যাওয়া-আসা করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। স্টেশনে মালামাল ও লাগেজ বহনের জন্য ৫০টি ট্রলি ও রোগী বহনের জন্য চারটি হুইলচেয়ার দেওয়া হলেও তা ব্যবহার করতে পারেন না যাত্রীরা। এসব ট্রলি দখল করে রাখেন স্টেশনের কুলি-লেবাররা। আর এসব কুলিদের দিয়ে মালপত্র আনা-নেওয়া করলে যাত্রীদের গুনতে হয় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অথচ একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব ট্রলি ফ্রিতে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া রেলস্টেশনের কুলিদের নির্দিষ্ট লাল পোশাক থাকলেও কেউ তা পড়েন না। ফলে অনেক সময় মালপত্র হারিয়ে গেলে কুলি শনাক্তে দ্বিধায় পড়েন যাত্রীরা। আবার এসব কুলিরা মানেন না কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা, নিজের ইচ্ছেমাফিক যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করেন টাকা। সিসিলনের পক্ষে কুলিদের দেখভাল করেন আবদুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি এবং তার সহযোগী হিসেবে আছেন ফিরোজা (৩৫) নামের এক নারী। তবে ফিরোজা সুইপার হলেও কাজ করেন কুলির।
কুলিদের কাছ থেকে টাকার একটি ভাগ মান্নানের পকেটে যায় বলেও জানা গেছে। এই মান্নানের অধীনে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ২০ জন কুলি ও ২৪ জন লেবার রয়েছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া ফ্রি ট্রলিগুলো দখল করে বসে আছেন কুলিরা। এসব ট্রলিতে করে কেউ ভারী মালামাল ও বড় লাগেজ প্ল্যাটফর্মে নিতে চাইলে দাবি করছেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেক যাত্রী দরকষাকষিও করছেন তাদের সঙ্গে, আবার অনেকে বাধ্য হয়ে ভাড়া নিচ্ছেন ট্রলি।
ট্রেন থেকে নেমে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের অক্সিজেনের বাসিন্দা আল আসিফ নামের এক যাত্রী ২৫০ টাকায় ভাড়া করেন এক কুলিকে। ট্রলিতে করে তার ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে যাচ্ছে ওই কুলি। এই সময় ওই কুলির নাম জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি। গায়ে কুলির পোশাক নেই কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
যাত্রীর কাছ থেকে কেন বেশি টাকা আদায় করা হয়—জানতে চাইলে ওই কুলি বলেন, আয় করা টাকার একটি অংশ দিতে হয় সিসিলনের পক্ষে দায়িত্বরত আবদুল মান্নানকে।
মহানগর ট্রেনের যাত্রী মোর্শেদা আক্তার যাবেন লাকসাম। স্টেশন থেকে প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত তার দুটি ব্যাগ ট্রলিতে করে নিতে তিনি কুলি ভাড়া করেন। এজন্য তাকে গুনতে হয় ২০০ টাকা।
এছাড়া রোগী বহনের জন্য রাখা চারটি হুইলচেয়ার চেইন দিয়ে তালা মেরে রাখেন ফিরোজা নামের এক নারী। পেশায় সুইপার হলেও মান্নানের সহযোগী হিসেবে স্টেশনে দাপট খাটান তিনি। করেন কুলির কাজও। তাকে টাকা না দিলে এসব হুইলচেয়ার ব্যবহার করা যায় না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিসিলন কোম্পানির পক্ষে দায়িত্বরত আব্দুল মান্নান নিজেকে রেলমন্ত্রীর এক আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি অপুর (রেলমন্ত্রীর আত্মীয়) নিয়োজিত লোক।’ তবে কুলিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বলেন, ‘বর্তমানে যাত্রীদের মালামাল বহনে ২০টি ট্রলি ও রোগী বহনে চারটি হুইলচেয়ার রয়েছে। এসব ট্রলি ব্যবহারে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টাকা দাবি করার নিয়ম নেই। যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেবেন তাই নিতে হবে।’
কুলিদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফিরোজা কুলি নন, তিনি সুইপার। স্টেশনে মান্নানের অধীনে ২০জন কুলি ও ২৪ জন লেবার রয়েছে।’
ডিজে