ম্যাক্সের ভুল ইনজেকশনে মারা যাওয়া বাবাকে খুঁজে ফেরে আদরের মেয়েটি

ক্ষতে রক্তক্ষরণের চিকিৎসা চলছিল হার্ট অ্যাটাকের ওষুধে

চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা রায়হান চৌধুরী রিংকুর পরিবারে এখনও চলছে শোকের মাতম। রিংকুর ৫ বছরের মেয়ে ওয়াসিকা চৌধুরী খুঁজে ফিরছে তার বাবাকে। পরিচিত কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করছে বাবার কথা। অন্যদিকে সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় রিংকুর মা। রিংকুর স্ত্রী রীনা আকতারের চোখেও কাঁপা আর্তনাদ ভারি করে তুলেছে তার ঘরের পরিবেশ।

গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। পরিবারের অভিযোগ, ম্যাক্স হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন রিংকু।

রিংকুর মামা কাজী এম আলমগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রিংকুকে হত্যার পর ভারতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিছুই ফেরত দেয়নি। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মিডিয়ায় বলে বেড়াচ্ছে ভারতে রিংকুর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিলো— যা পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। ভারতে রিংকু তার উরুর পাশে জন্মগত একটি শিরার অপারেশন করায় প্রায় ৪ বছর আগে।’

তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে রিংকু সুস্থ জীবনযাপন করে আসছিল। গত মঙ্গলবার তার পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হয়। ডান পায়ে চলাচলে অসুবিধা হলে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। সারারাত কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না এনে ডিউটি চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিয়ে আসছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সকালে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে ডা. ইব্রাহীম খলিলের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রিংকু।’

কাজী এম আলমগীর আরও বলেন, ‘অপারেশনের স্থানে ক্ষতের কারণেই রক্তপাত হচ্ছিল রিংকুর। এ বিষয়ের চিকিৎসা না করে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। ম্যাক্স হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠান কখনো এ দায় এড়াতে পারে না। ভিডিও ক্লিপে স্পষ্ট দেখা গেছে, হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন প্রসাদ গুপ্ত নিজেই ভুল চিকিৎসার কথা স্বীকার করেছেন।’

এদিকে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সিভিল সার্জন অফিসে ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন রিংকুর পরিবারের সদস্যরা। আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে তার কবর জেয়ারতে অংশ নেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বয়েজ ক্লাবের পক্ষ থেকে তার কবরে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জুমার নামাজে অংশগ্রহণকারী এলাকাদ মুসল্লিদের মুখে ছিল একটাই কথা— ‘রিংকুর হত্যাকারী ম্যাক্স হাসপাতালের বিচার হবে তো?’

আইএমই/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!