মোশাররফ মঞ্চে নিয়ে এলেন বাবু কায়সার মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও

তাঁরা নেই। ছবির মানুষ হয়ে গেছেন বহু আগে। চট্টগ্রাম তাঁদের ভোলেনি। ভোলেননি তাঁদেরই ঘনিষ্টজন বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি যখন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান কায়সার ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা বলছিলেন তখন তাঁর চোখে মুখে ভাসছিল এই তিন নেতার ছবি। কর্মী সমর্থকরা যেন তাঁর পাশেই মঞ্চে দেখছিলেন ওপারে চলে যাওয়া হৃদয়ের এই মানুষগুলোকে। ছিলেন তিনি আবেগাপ্লুত। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সেই আবেগ ছুঁয়ে গেছে সম্মেলনে যোগ দেয়া নেতাকর্মীদেরও।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় নগরীর লালদীঘি ময়দানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্না বিজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আজকে আবেগের মধ্যে আছি। এটা হয়তো আমার জীবনের শেষ সম্মেলন হতে পারে। কারণ আমার সাথে এই মঞ্চে যারা থাকতো সেই আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী আজকে আমার পাশে নেই। আজ আমার পাশে অনেকেই নেই। আজকে হয়তো আমি শেষ সম্মেলন উদ্বোধন করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে বলতে চাই, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আমরা একটা সুসংগঠিত এবং আমরা শেখ হাসিনার একেকজন অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে যাচ্ছি’। মোশারফের সেই আবেগ ছুঁয়ে যায় মাঠের কর্মী সমর্থকদেরও।

আন্দোলন সংগ্রামে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উওর জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ইতিহাস আছে। ১৯৮০ সালে যখন স্বৈরাচারী জিয়ার বিরুদ্ধে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছিলাম, তখন আমাদের মিছিলের ওপর আক্রমণ হয়। নিউ মার্কেট মোড়ে আমার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে যাওয়ার পথে শিবির আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমাকে লাঞ্ছিত করে। তিনবার পঙ্গুত্বের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা একটি সুসংগঠিত ইউনিট হিসেবে শেখ হাসিনার অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় আমরা নিয়মিতভাবে সম্মেলন করে আসছি। আজকে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সম্মেলনের মাধ্যমে যারা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে তাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেবেন। পদ পেয়ে পদ-পদবী ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করবে, এমন কারও হাতে নেতৃত্ব তুলে দেবেন না। এমন লোক আমরা চাই না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মিরসরাই সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সাংসদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিক কোনও পদে না থাকলেও উত্তর জেলার রাজনীতিতে তিনি এখনও অঘোষিত সম্রাট। তার আঙ্গুলি ইশারাতেই চলে ওই অঞ্চলের রাজনীতি। তাকে ঘিরেই মূলত আবর্তিত হয় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!