মোটে ৯৯ কোটি টাকা আকিজের ৪ একাউন্টে, আছেন বিএনপি নেতার আশ্রয়ে

৩০০ কোটি তুলে নিতে চেয়েছিলেন শেষ মুহূর্তেও

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পিএস থেকে রাতারাতি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হয়ে ওঠা আকিজ উদ্দিনের চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে পাওয়া গেছে মাত্র ৯৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ওই টাকার খোঁজ পাওয়ার পরই একাউন্টগুলো থেকে টাকা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

এই চারটি একাউন্টের মধ্যে রহমান রহমান অ্যান্ড সন্সের একাউন্টে জমা আছে ৫৬ কোটি ২৪ লাখ, আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউসে জমা আছে ৮ কোটি ২৮ লাখ, মোস্তাক ট্রেডার্সের একাউন্টে জমা আছে ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা, নজরুল এন্টারপ্রাইজের একাউন্টে জমা আছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং নুরুল আলম নামের অপর একটি ব্যাংক একাউন্টে জমা আছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ।

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পক্ষে ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও বাকি সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন। শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। এস আলম গ্রুপের হয়ে ভুয়া কোম্পানি খুলে নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা বের করে নেওয়ার কাজটি করতেন আকিজ উদ্দিনই।

৩০০ কোটি তুলে নিতে চেয়েছিলেন শেষ মুহূর্তেও

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আকিজ উদ্দিন। তার নানামুখী তদবিরের পরও ব্যাংক কর্মকর্তারা চেকগুলো আটকে দিয়ে ফেরত পাঠান।

৬ আগস্ট সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের পাঁচটি চেকে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার জন্য পাঠানো হলে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার তাতে প্রাথমিক অনুমোদন দেন। চেকগুলো ইস্যু করা হয়েছিল ‘গোল্ডেন স্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে। অস্তিত্বহীন ওই প্রতিষ্ঠানের মূল একাউন্ট ছিল চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ শাখায়। এগুলো নগদে উত্তোলন করার কথাও ছিল আগ্রাবাদের ওই শাখা থেকে। তবে টাকার অংক বেশি হওয়ায় সেটি পাঠানো হয় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে। সেখানেই চেকটি আটকে দেওয়া হয়।

‘গোল্ডেন স্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি ও সাইফুল আলম মাসুদের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনের তৈরি করা একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান। আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের হয়ে এভাবে বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা তুলে নিতেন।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ‘গোল্ডেন স্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটির একাউন্ট থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঘুষ দেয়ার কথা বলেও মাঝে মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা তোলা হতো।

আকিজ এখন কোথায়?

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সিঙ্গাপুরে চলে গেলেও আকিজ উদ্দিনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি।

বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে আকিজ উদ্দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের বাসায় অবস্থান করছেন— এমন খবর পেয়ে গত ১১ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনীর একটি টিম ওই বাসায় অভিযান চালায়। তবে চট্টগ্রাম নগরীর চট্টেশ্বরী রোডে মীর নাছিরের ওই বাসায় ঘন্টাব্যাপি অভিযানে আকিজ বা তার বস্তাভর্তি টাকার কোনো খোঁজ মেলেনি শেষ পর্যন্ত।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আকিজ উদ্দিন পরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার আশ্রয়ে যান। ওই নেতার বাড়িও পটিয়ায়। তবে বর্তমানে তিনি ওই নেতার আশ্রয়ে আছেন কিনা, সেটা নিশ্চিত করা যায়নি।

ইসলামী ব্যাংক দখলে যুবদল নেতাকে ভাড়া করেন আকিজ

গত ১১ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দখল করতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নকে ভাড়া করার কাজটিও আকিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানেই হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এস আলম গ্রুপের পক্ষের লোকজনকে ব্যাংকটিতে প্রবেশের চেষ্টায় বাধা দেওয়ার পর কর্মকর্তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় ৫ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন।

অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এস আলম গ্রুপের হয়ে নয়ন ও তার অনুসারীরা ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ব্যাংক দখলে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেন। ব্যাংক দখলে নিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

জানা গেছে, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের ঘনিষ্ঠজন। রকিবুল ইসলাম বকুল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে পরিচিত।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm