মেয়র রেজাউল ‘রিভিউ কমিটি’র প্রধান নন, নেতৃত্ব দেবেন মাহতাবই— জানালেন মাহবুবউল আলম হানিফ

নগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনও চলবে

চট্টগ্রামের খবর শুনে নিজেই বিস্মিত হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে বিরোধে জড়িয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে রাজধানীতে বসার সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম নগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এই সভায় সম্মেলনের বিষয়ে কোনো আপত্তি কিংবা অভিযোগ থাকলে সেগুলো দেখার জন্য নগর আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে নিয়ে একটি ‘রিভিউ টিম’ করার কথা জানানো হয়। কিন্তু এর মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে ওই ‘রিভিউ টিমের’ প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে এমন কথা শুনে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি জানালেন, রিভিউ কমিটির কার্যক্রম চলবে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে।

মাহবুবউল আলম হানিফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের রিভিউ কমিটিতে কাউকে আহবায়ক কিংবা প্রধান সমন্বয়ক করা হয়নি। রিভিউ কমিটি চলবে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব ভাইয়ের পরামর্শে। এতে সহযোগিতা দেবে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি ৪ সিনিয়র নেতা। বেশি অভিযোগ আসা ইউনিট কমিটির বিষয়াদি সমাধানেই এই রিভিউ কমিটি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ উল্টো প্রশ্ন রাখেন, ‘রেজাউলকে কেন প্রধান সমন্বয়ক করা হবে? নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কি নেই?’

চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ওয়ার্ড সম্মেলন আপাতত বন্ধ থাকবে— এ বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চাইলে মাহবুবউল আলম হানিফ বিস্ময় প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কী বলেন? নগরের ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন বন্ধ থাকার জন্যই কি (ঢাকায়) এই সভা হয়েছে?’

হানিফ বলেন, ‘কে কী বললেন এসব দেখার বিষয় না। বাকি ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষেই ওয়ার্ড সম্মেলন হতেই হবে।’

নবগঠিত রিভিউ কমিটির কাজ কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘১০২টি ইউনিট সম্মেলনের মধ্যে যেসব ইউনিটে অধিক অভিযোগ রয়েছে, ওইগুলো প্রতিবেদন আকারে কেন্দ্রে পাঠাবে তারা। প্রতিবেদন দেখেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বাড়াতে নগরের প্রতিটি থানায় একটি করে সাংগঠনিক টিম করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এই সভা শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

ঢাকায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সেই ‘নালিশী বৈঠক’ শেষ হয় ইউনিট কমিটি গঠন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে বিরোধে জড়িয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে রাজধানীতে বসার সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রাম নগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এই সভা ঘিরে চট্টগ্রামে দফায় দফায় গোপন বৈঠক, কথার যুদ্ধ চলে আসলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকার বৈঠকটি অনেকটাই ‘সান্ত্বনার সভা’য় রূপ নেয়।

সভায় হাজির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা শুরুতেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের আনা বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন। পরে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব অভিযোগের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কমিটির সকলে মিলে বসে সম্মিলিতভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। এ সময় ইউনিট সম্মেলন শেষে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্য থেকে ৩-৪ জন করে প্রত্যেক থানায় আলাদা করে টিম করে সম্মেলনের কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের নেওয়া আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, নগরের বন্দর আসনের সাংসদ এমএ লতিফ, কোতোয়ালী আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সহ সভাপতি এডভোকেট সুনীল সরকার, জহিরুল আলম চৌধুরী দোভাষ ডলফিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম।

ঢাকার ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন যে সমস্ত ইউনিটের সম্মেলন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সে সকল ইউনিটগুলোতে অনিয়ম থাকলে রিভিউ কমিটির মাধ্যমে সংশোধন করা হবে।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এই রিভিউ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নঈম উদ্দিন চৌধুরী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!