চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়ে দুই দিনে দুই রকমের বক্তব্য দিলেন বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। প্রথমে এটিকে ‘স্বাভাবিক বিষয়’ বললেও এক দিন পর নিজের সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বললেন তিনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’। মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য ‘দলের ভেতরে ষড়যন্ত্র’ হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘বললে মেয়র পদ এমনিতেই ছেড়ে দিতাম, এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও অপরাজনীতির তো কোনো দরকার ছিল না।’
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর একদিন আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে নিজ বাসভবনের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘মনোনয়ন আমার পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আজীবন আমি একটি পদে থাকবো না। প্রত্যেকেই ক্রমান্বয়ে পদে আসবে। এটি সাধারণ বিষয়। কেউ আসবেন, কেউ বিদায় নেবেন— এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এসব নিয়ে কাল্পনিক কারণ খোঁজাটা আমি স্বাভাবিক মনে করি না।’
তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় তার মধ্যে কোনো ক্ষোভ, হতাশা, দুঃখ, বেদনা, আক্ষেপ, কষ্ট নেই বলেও প্রেসক্লাবের মতবিনিময় সভায় দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘শুধু কষ্ট পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়ের সঙ্গে আমার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায়, যা শতভাগ মিথ্যা।’
তিনি বলেন, ‘মেয়র পদের মনোনয়ন আটকে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেওয়া খুবই দুঃখজনক। কারও মেয়র পদ লাগলে আমাকে সরাসরি বলতে পারতো। প্রয়োজনে আমি মনোনয়ন সংগ্রহ করতাম না। কিন্তু এ রকম এ অপপ্রচার কিছুতেই কাম্য নয়।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার আগে দুজন ব্যক্তির সাথে আ জ ম নাছিরের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই মামুনুর রশিদ খান হেলাল ও তার চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা একরাম খানকে দেখা যায়। এই ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ওই ছবিটি প্রসঙ্গে মেয়র নাছির বলেন, ‘তিনদিন আগে আমাকে একটা ছবি দেখানো হল। সেখানে দেখলাম, একটা ছবিতে গোল চিহ্ন করা হয়েছে, পাশে একরাম খান নামে একটা ছেলে। সে ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিল। ছাত্রলীগের শাহজাহান-কলিম কমিটির এক নম্বর সহ-সভাপতি ছিল। সে এখন তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় একটি কলেজের অধ্যক্ষ। সেখানে থানা আওয়ামী লীগের মেম্বার এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে তার (একরাম) একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। একদিন আমাকে এসে বলল, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা আপনি একটু উদ্বোধন করে দেন। আমি জাস্ট ওকে চিনি, সে হিসেবেই নগরীর অক্সিজেনের ওখানে গিয়ে একটা কেক কেটে চলে এসেছি। আমার পাশে কে দাঁড়িয়েছে, না দাঁড়িয়েছে আমি দেখিওনি। ছবিতে আরেকটা যেটা বলা হচ্ছে শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই, তাকে আমি চিনিও না, জীবনে কোনোদিন দেখিওনি। সেই লোকের পাশে দাঁড়ানোর ছবি কিভাবে এসেছে, সেটা যারা ছড়িয়েছেন, তারাই বলতে পারবেন। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, তার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক, যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ নেই।’
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অন্তত একটি ছবিতে দেখা যায়, শাহরিয়ার রশীদ খানের ভাই মামুনুর রশিদ খান হেলালের সঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে কানে কানে কথা বলছেন। ছবিটির সত্যাসত্য চট্টগ্রাম প্রতিদিন অবশ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
গত নির্বাচনে প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান নাছির উদ্দিন। সেবার বিএনপির এম মনজুর আলমকে ‘হারিয়ে’ মেয়র হয়েছিলেন তিনি। আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে মেয়র নাছিরের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী।
এআরটি/সিপি