মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি—হালদায় মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে, চা বাগানেও যেন আশির্বাদ

প্রচণ্ড গরমের পর অবশেষে চট্টগ্রামে ঘনঘোর মেঘমালা, বিজলী চমকানি আর বজ্রের গর্জনে স্বস্তির বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল দমকা হাওয়া এবং কালবৈশাখী ঝড়। আর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। সকাল আটটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত এবং হিমেল দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকে।

টানা পাঁচ মাসব্যাপী খরা-অনাবৃষ্টি ও অসহনীয় তাপদাহের পর এই প্রত্যাশিত বৃষ্টি ও শীতল বাতাস জনজীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। চট্টগ্রাম আমবাগান আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, সকালে চট্টগ্রামে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কোন কোন এলাকায় বৃষ্টির পরিমাপ কম বেশি হতে পারে। তবে, চট্টগ্রাম জুড়েই এ বৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামে কঠোর লকডাউন চলছে। বন্দর নগরীর সড়ক রাস্তাঘাট ফাঁকা। সকালে চারিদিকে সুনসান নীরবতা। এ সময়ে ঘনঘোর মেঘের সাথে হিমেল দমকা হাওয়াসহ মাঝারি বর্ষণের সুবাদে একটু শীতল পরশ পেতে ঘরের বাইরে গিয়ে অনেককে খালি সড়কে গা ভিজাতে দেখা গেল। চট্টগ্রামে সকালের বৃষ্টি ছিল মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি। সাথে দমকা হাওয়া ও কালবৈশাখী ঝড়ে নগরের বিভিন্নস্থানে গাছ ও ডালপালা ভেঙে উপড়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের ওপর গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়েছে।

চা বাগানের জন্য আর্শিবাদ
বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টির দেখা না মেলায় প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছিল চট্টগ্রামের ২১টি চা বাগান। পানির অভাবে ছোট গাছগুলোও মরে যাচ্ছিল। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বৃষ্টির দেখা মিললেও এবার ঘটছে তার ব্যতিক্রম। এপ্রিলের ১৬ তারিখ অতিবাহিত হলেও বৃষ্টির ছিটে ফোঁটাও পাচ্ছিল না বাগানগুলো। অবশেষে এ বৃষ্টি বাগানের জন্য আর্শিবাদ বয়ে এনেছে।

ব্র্যাকের মালিকাধীন কর্ণফুলী চা বাগানের ডিজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার (১৭ এপ্রিল) ভোরে ১.৫ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তর কর্ণফুলী চা বাগানে। এ বৃষ্টি বাগানের জন্য আর্শিবাদ। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। গাছে নতুন কুড়ি নেই। খণ্ড খণ্ড বাগান জ্বলে যাচ্ছে খড়ায়। তিনি বলেন, ৬ মাসের তীব্র খরায় চট্টগ্রামের বাগানগুলোর প্রায় ২৫ ভাগ ইয়ং টি গাছ রোদে শুকিয়ে মরে গেছে।

হালদায় মা-মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি
এদিকে এশিয়ায় মিঠাপানির রুই কাতলা মৃগেল (কার্প) জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র ‘মাছের ব্যাংক’ খ্যাত হালদা নদীতে মা-মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে মা মাছেরা ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে। সাধারণত এই মৌসুমে বজ্রবৃষ্টির সময়ে এবং উজান থেকে আসা ঘোলা পানির স্রোতে রুই কাতলা মৃগেল মা মাছেরা ভেসে ওঠে এবং দলে দলে ডিম ছাড়ে। অভিজ্ঞ জেলেরা বিশেষ পদ্ধতিতে নৌকার সাহায্যে সেই ডিম সংগ্রহ করে। পরে ডিম থেকে রেণু ও পোনা ফোটানো হয় তাপমাত্রা ও পানি নিয়ন্ত্রিত পুকুর ও কুয়ায়। জেলেরা এখন হালদার উভয় তীরে প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং যশোর, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা অঞ্চলের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুমারখালী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তা কিছু কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ পারদ ছিল যশোরে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ও বুধবার রাজশাহীতে পারদ উঠে ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু’দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে পারদ নেমেছে ৩ ডিগ্রি সে.। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১ মি.মি. এবং নেত্রকোনা ও শ্রীমঙ্গলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!