মেয়ে-ভাইসহ চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রেজাউলের বিরুদ্ধে নতুন মামলা
হত্যার হুমকি, অপহরণ করে জায়গা লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
গুম করে হত্যার হুমকি, অপহরণ করে জায়গা লিখিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে মেয়ে ও ভাইসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রেজাউলসহ মামলায় মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যরা হলেন— রেজাউল করিমের মেয়ে সাবিহা তাসনিম তানিম (৩৫), রেজাউলের ভাই নুরুল করিম চৌধুরী (৬০), চান্দগাঁও বহদ্দারবাড়ির মাহামুদুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ মান্না (৫০) ও নজরুল ইসলাম অপু (৪৫) এবং চান্দগাঁও বারই পাড়ার টিপু রহমান (৩৭)।
সোমবার (৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতের বিচারক জুয়েল দেব মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বোয়ালখালীর আকুবদণ্ডীর বাসিন্দা নগরীর দক্ষিণ খুলশী এলাকায় বসবাসরত সাইফুদ্দিন সৈয়দ ফৌজদারী অভিযোগটি দায়ের করেন। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব ষোলশহর মৌজার ১৭৬৪ বর্গফুটবিশিষ্ট সেমিপাকা দোকান ও ২.০৪ শতক ভিটি ভূমি ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাহামুদুর রহমান চৌধুরী মান্না ও টিপু রহমান নামের দুই ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেন। ২০২০ সালে রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার প্রভাব খাটিয়ে মান্না ও টিপু দুজনই ভাড়া পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন। এর মধ্যে সাবেক মেয়র রেজাউল নিজেই সাইফুদ্দিনের মালিকানাধীন জায়গা দখলের চেষ্টা শুরু করেন। দখলে ব্যর্থ হয়ে পরে জায়গাটি কেনার প্রস্তাবও দেন। কিন্তু সাইফুদ্দিন তাতে রাজি না হলে রেজাউল হুমকি দেন এই বলে— ‘তুমি বোয়ালখালীর লোক, আমার বাড়ির পাশে তোমাকে মার্কেট নির্মাণ করতে দেবো না।’ একপর্যায়ে রেজাউল তাকে বলেন, বিক্রি না করলে বা জায়গার দখল না ছাড়লে বাদিকে সিলেটের ইলিয়াস আলীর মতো রাতের অন্ধকারে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবেন। এ সময় মান্না ও টিপুও জায়গার মালিক সাইফুদ্দিনকে হুমকি দিতে থাকেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে সাইফুদ্দিন তার বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই রেজাউল করিম ছাড়াও তার মেয়ে সাবিহা তাসনিম তানিম, ভাই নুরুল করিম চৌধুরী (৬০), চান্দগাঁও বহদ্দারবাড়ির মাহামুদুর রহমান চৌধুরী প্রকাশ মান্না মিলে জোর করে তাদের গাড়িতে ওঠায়। গাড়িটি এরপর চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের চান্দগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নিচতলার সামনে আসে। তখন নজরুল ইসলাম অপু ও টিপু রহমানও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখান থেকে জোর করে সাইফুদ্দিনকে রেজিস্ট্রি অফিসের দোতলায় নিয়ে গিয়ে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর হুমকির মুখে সাইফুদ্দিনের কাছ থেকে নির্দায় সাফ বিক্রয় কবলা দলিলে দস্তখত আদায় করেন তারা। সেখানে কী লেখা ছিল, তাও তাকে পড়তে দেওয়া হয়নি। সাইফুদ্দিন শুধু দলিলের ওপরদিকে দেখতে পান, সেখানে জায়গার পরিমাণ ৬.০৮ শতক বা ০৬০৮ শতাংশ বা (৩-২২২ দন্ত (তিন গন্ডা দুই সমস্ত বার ভাগের এগার দন্ত) এবং টাকার পরিমাণ এক কোটি ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা লেখা হয়েছে। সাইফুদ্দিন তখন রেজাউলকে বলেন, ‘আমার ৪ কোটি টাকার সম্পত্তির মূল্য আপনি এক কোটি ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা লিখেছেন কেন?’
একথা শুনে রেজাউল করিম বলেন, ‘তোমার জায়গার সব মূল দলিল এবং খতিয়ানাদি নিয়ে একমাস পরে আমার সিটি কর্পোরেশনের অফিসে (টাইগারপাস অফিসে) নিয়া আসিও। আমি তোমাকে তোমার প্রাপ্য তিন কোটি ১৩ লক্ষ টাকার পে-অর্ডার দেবো।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরে সিটি কর্পোরেশনের অফিসে রেজাউলের কাছে যাওয়ার পর তিনি কোনো টাকা দিতে অস্বীকার করেন। উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক মেয়র রেজাউল হুমকি দেন, এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করলে বা আইনের আশ্রয় নিলে সাইফুদ্দিনকে ইলিয়াছ আলীর মত রাতের আঁধারে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবেন।
বাদি জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের পদ বিলুপ্ত করলে তিনি মামলা করার জন্য উদ্যোগী হন।
সিপি