মেয়াদহীন কমিটি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম নগর যুবদল, ঝিমিয়ে নেতাকর্মীরা

মেয়াদহীন কমিটিতে ৫ বছর

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কার্যক্রম। কমিটির মেয়াদ ৫ বছর পার হলেও এখনও নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। অথচ গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন বছর পর পর কমিটি দেওয়া নিয়ম রয়েছে।

এদিকে পদ-পদবি না পেয়ে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম।

তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই চট্টগ্রাম নগর যুবদলের কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা।

শিগগিরই ত্যাগী, দলের দুঃসময়ে কারা নির্যাতিত ও সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।

এছাড়া দীর্ঘদিন যুবদলের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় মাঠ পর্যায়ে সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে। সেইসঙ্গে হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সভাপতি পদের দৌড়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ এবং বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহেদ।

জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ নামে রয়েছে ১৫২টি রাজনৈতিক মামলা, কারাভোগ করেছেন সাতবার। সম্প্রতি তার অধিকাংশ মামলায় চার্জশিটও দিয়েছে পুলিশ।

এছাড়া মোহাম্মদ সাহেদের নামে রয়েছে অন্তত ৩০টি মামলা। তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান যুবদলের সহসভাপতি ফজুলুল হক সুমন। তার নামে রয়েছে নয়টি মামলা।

আরও আছেন নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, নগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, নগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ শহিদ। এদের মধ্যে মোশাররফের আছে ১৭টি, বাদশার ২২টি এবং শহীদের রয়েছে তিনটি মামলা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম নগর যুবদলের একাধিক সাবেক নেতা জানান, এক নেতার এক পদবি। এনিয়ে প্রতিটি পর্যায়ে কমিটি গঠনে সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু চট্টগ্রামে সেটি মানছে না কেউ। বর্তমান যুবদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষ পর্যায়ে দুই নেতা দুই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এক লোক যদি গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে থাকেন, তাহলে তাকে দিয়ে মৌলিক কোনও দলীয় কাজ করানো সম্ভব না।

তারা আরও জানান, বর্তমান যুবদলের কমিটি গত পাঁচ বছর ধরে সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। মামলা ও হামলার ভয়ে ওই কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওই কমিটির প্রথম সারির কেউ কেউ দীর্ঘদিন শুধুমাত্র মসজিদকেন্দ্রিক দোয়া ও মাহফিলে সীমাবদ্ধ ছিলেন। তারা ১৫ থানা ও সাংগঠনিক ৪৩ ওয়ার্ডে কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাহেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ১৯৮৯ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক পদের মাধ্যমে ছাত্রদলের আমার প্রথম পদ পাওয়া শুরু। ১৯৯০ সালে কারাগারেও গিয়েছি। তবে নেতা নই, একজন কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

জানতে চাইলে এই প্রসঙ্গে গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে পটিয়া বরুলিয়া ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে শুরু আমার ছাত্ররাজনীতি। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি দায়িত্ব পালন করেছি। ১/১১ এর সময় দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলনে কারা নির্যাতিত হয়েছি। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় সাতবার কারাগারে গিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার নামে ১৫২টি রাজনৈতিক মামলা দিয়েছে এই সরকার। শুক্রবার-শনিবার ছাড়া সরকারি কার্যদিবসের প্রতিদিন প্রায় ৯টি মামলার হাজিরা দিতে আদালতপাড়ায় যেতে হয় আমাকে। গত ১৫ বছর ধরে এভাবে অবৈধ সরকারের আক্রমণের শিকার হচ্ছি।’

এর আগে ২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি ও মোহাম্মদ সাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদল চট্টগ্রাম নগর শাখার পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ওই বছরের ৩ অক্টোবর ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm