মেম্বারের কাণ্ড, ঘুষের কথা ‘বলে দেওয়ায়’ ত্রাণ বন্ধ দিনমজুরের

দিনমজুর মো. বাদশার অভাবের সংসারে ভাঙ্গা ঘর নিয়ে সংকটে থাকায় গত বছর সরকারিভাবে একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এলাকার লোক বলে ওই ঘর বরাদ্দ পেতে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার শহীদ তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ওই জনশ্রুতিই কাল হলো বাদশার। শহীদ মেম্বারের রোষে পড়ে পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাদশা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে থাকলেও সরকারি একমুঠো চালও পাননি। শহীদ মেম্বারের এক কথা— ঘর বরাদ্দের ৭ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা বলে দিয়েছে বলেই কোন ত্রাণ পাবেন না বাদশা।

ধলঘাট ইউনিয়নের উত্তর সমুরা গ্রামের বাসিন্দা বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দিনমজুর। আমাদের সঞ্চয় থাকে না। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট করছি। এলাকার সব ত্রাণ দেওয়া হয় শহীদ মেম্বারের মাধ্যমে। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন আমাকে কোন ত্রাণ দেওয়া হবে না। কিভাবে কী করব বুঝতে পারছি না।’

বাদশা আরও বলেন, ‘গত বছর আমি একটা সরকারি ঘর পেয়েছিলাম। যেটি দেয়ার জন্য মেম্বার আমার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। বলেছিলেন এই কথা যাতে কাউকে না বলি। আমি বলিওনি। তবু কিভাবে যেন এটা অনেকেই জেনে গেছে। মেম্বারের ধারণা আমিই সবাইকে জানিয়েছি। তাই তিনি এবারে আমাকে কোন সাহায্য করবেন না বলেছেন। সরকারি চাকরির লোকও ত্রাণ পাচ্ছে এলাকায়। অথচ পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে থেকেও আমি কোন ত্রাণ পাচ্ছি না।’

ঘরের বিষয়ে লেনদেনের ঘটনা ব্যাখ্যা করে বাদশা বলেন, ‘সরকারি সেমি পাকা ঘর দেওয়ার কথা বলে মেম্বার প্রথমে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন আমার কাছে। আমি বলেছি আমার কাছে তো এত টাকা নাই। আমি এক-দুই হাজার টাকা দিতে পারব টেনেটুনে। কিন্তু মেম্বার সেটা মানেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি ৭০০০ টাকার বিনিময়ে ঘর দিতে রাজি হয়েছেন। নিরুপায় হয়ে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০০০ টাকা ধার করে ঘরটা নিই আমি। তবে সে ঘরটি সেমিপাকাও ছিল না, ছিল টিনের ঘর। পরে এটি কোনভাবে এলাকার লোকজন জেনে যায়। এ কারণে মেম্বার আমার ওপর ক্ষ্যাপা। আমাকে কোন ত্রাণ দিচ্ছেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের কয়েকজন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন ইউপি সদস্য শহীদ। ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতে গেলে তিনি ও তার ভাইরা মিলে তেড়ে আসেন।

গত বছর ওই এলাকায় এসি ল্যান্ডের মাধ্যমে ঘর দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রণবীর ঘোষ বলেন, ‘ঘর দিয়েছে এটি সত্য। তবে সুবিধাভোগীরা বিনা পয়সায় ঘর পেয়ে থাকেন। সরকারি ঘর দেওয়ার পরিবর্তে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।‘

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য শহীদের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তার শত্রুরা এসব করছে। গত বছর দুটি ঘর দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

পটিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘এ ধরনের কোন তথ্য পাইনি। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখবো। তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ হলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থাও নেবো।’

এমআর/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!