মৃত তিন সন্তানকে দেখতে গিয়ে বরখাস্ত রেল কর্মচারী, পরে প্রত্যাহার

চট্টগ্রামের পটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন গোপীনাথ মজুমদার। প্রতিদিনের মতো তিনি স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছিলেন। সকাল ৮টায় তার কাছে খবর আসে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী অসুস্থ। এর দু’ঘণ্টা পর স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর হলে তিনি স্টেশন মাস্টারকে জানিয়ে ছুটে যান চট্টগ্রাম মেডিকেলে।

কিন্তু সেখানে গিয়ে বিষাদে ভরে ওঠে তার বুক। তার স্ত্রী তিন সন্তানের জন্ম দিলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে সবাই মারা যান। নবজাতক সন্তানের মৃত্যুশোকের মধ্যেই গোপীনাথ জানতে পারেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ। তবে বরখাস্তের ঘটনায় সমালোচনা শুরু হলে এক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়।

রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি অস্বীকার করে গোপীনাথকে ‘সামান্য বকাঝকা’ করা হয়েছে বলে জানান।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মো. ইমরান পরিদর্শনে গিয়ে গোপীনাথকে না দেখলে তাৎক্ষণিক কন্ট্রোল আদেশে বরখাস্তের আদেশ দেন। পরে সমালোচনা শুরু হলে তা প্রত্যাহার করা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ১০ টার দিকে অবস্থা গুরুতর হলে স্টেশন মাস্টার রাশেদুল আলমের মৌখিক অনুমতি নিয়ে স্ত্রীকে দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে যান গোপীনাথ। দুপুর ১২টার দিকে ডিসিও তারেক মো. ইমরান পটিয়া স্টেশন পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি গোপীনাথের বিষয় জানতে চাইলে মাস্টার রাশেদুল আলম তার স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর এবং তাকে দেখতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যাওয়ার কথা জানান। এ কথা শুনে ডিসিও তাৎক্ষণিক কন্ট্রোল অর্ডারে (১৮৮ নম্বর) গোপীনাথকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

এদিকে গোপীনাথের স্ত্রী সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম সন্তান ও কিছু সময় পর আরও দুই সন্তান জন্ম দিলেও তারা মারা যায়। দুপুর ১টায় তিন সন্তানের লাশ ও মুমূর্ষু স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাগলপ্রায় গোপীনাথ জানতে পারেন বরখাস্তের কথা। তার সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় সমালোচনা শুরু হলে এক ঘণ্টা পর আরেক কন্ট্রোল অর্ডারের মাধ্যমে (১৯২ নম্বর) তা প্রত্যাহার করা হয়।

ক্ষোভ ঝেড়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বুকিং সহকারী বলেন, গোপীনাথ মুমূর্ষু স্ত্রী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় মাস্টারকে বলে গিয়েছে। এছাড়া রাত ৯টার আগে গোপীনাথের স্টেশনে কোনো কাজও ছিল না। এর মধ্যে তার সদ্য ভূমিষ্ট ৩ সন্তানও মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং আবার তড়িঘড়ি করে তা প্রত্যাহার করা হয়। এটি চরম অমানবিক কাজ হয়েছে।

এ বিষয়ে গোপীনাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে সকাল ১০ টার দিকে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রওনা দিই। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার প্রথম সন্তান এবং পরে আরও দুটিসহ তিন সন্তান মারা যায়। এসময় শুনি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তখন আমার মানসিক অবস্থা কি রকম ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মো. ইমরান বলেন, গোপীনাথকে কোনো ধরনের বরখাস্ত করা হয়নি। এ খবর আপনাকে কে দিলো? স্টেশন পরিদর্শনে তাকে অনুপস্থিত পেয়ে কেবল একটু বকাঝকা করা হয়েছে। এটি খুবই সামান্য বিষয়। অফিস পরিচালনায় এরকম অনেক কিছু করতে হয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm