মূর্তি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় প্রবাসী পরিবারকে হেনস্তার অভিযোগ

চট্টগ্রামে মামলাবাজ চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই মামলাবাজ চক্রটি সুযোগ বুঝে অসহায় লোকজনকে এলাকাছাড়া করে তাদের বসতভিটা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি প্রদীপ দত্ত নামের এক ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন— এমন অভিযোগ করেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা এলাকার দুবাই প্রবাসী সুপন সিকদার সুমনের পরিবার। একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে এই প্রবাসীর বিরুদ্ধে।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে উপজেলার শোলকাটা গ্রামের প্রদীপ দত্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির উঠানে টিনের বেড়া দিয়ে লোকনাথ আশ্রম নামে একটি মন্দির তৈরি গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিষ্ঠাকাল ২০০২ সাল। মন্দিরে ভেতরে দুটি মূর্তিও রয়েছে। ওই মন্দিরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ এনে আধা কিলোমিটার দূরে পাশের বাড়ির পরিমল সিকদারের পরিবারের ৭ সদস্যকে আসামি করে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন প্রদীপ দত্ত।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রদীপ দত্ত ও পরিমল সিকদারের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধের জেরে প্রদীপের বাড়ির উঠানের লোকনাথ মন্দিরের দুটি সরস্বতী মূর্তি রাতের আধারে কে বা কারা ভাংচুর করেছে। কিন্তু মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় দুদিন পর পাশের বাড়ির পরিমল সিকদারের পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রদীপ। অথচ ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। সেদিন পরিমল সিকদারের ছেলে দুবাইপ্রবাসী সুপন সিকদার সুমন নগরীর আগ্রাবাদ স্টুডিওতে একটি গান রেকর্ডিং কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও দুবাইপ্রবাসী সুপন সিকদারের বিরুদ্ধে হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বাকি সদস্যেদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিমল সিকদারের ভাতিজা সুজন সিকদার বলেন, ‘এ ঘটনায় দুবাইপ্রবাসী সুপন সিকদার সুমন ও তাদের পরিবারের সবাইকে আসামি করা হলেও তারা ঘটনার সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমরা ভূমিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তখন প্রদীপ বলেছিল, সে আমাদের কাছে জমি পাবে— এজন্য মামলা করেছে। এ সময় ভূমিমন্ত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর, আনোয়ারা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলন ও এডভোকেট হরিপত্ত চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দেন বিষয়টি দেখার জন্য। তারপর উনারা একটি বৈঠকও করেন আমাদের নিয়ে। একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে সে হয়রানি করছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ঝুন্টু সিকদার বলেন, ‘প্রদীপ একজন এলাকায় ভূমিদস্যূ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সুদের ব্যবসাও আছে তার। সে এলাকার একটি হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি ছিল। টাকার বিনিময়ে মামলা আপোষ করে পার পেয়ে যায়। তার অত্যাচারে আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অজিত মিত্রের ছেলে সুপন কর মিত্রকে মামলা দিয়ে অতিষ্ঠ করে ফেলার কারণে তারা পরিবার নিয়ে ভারতে চলে যায়। এলাকার সাধারণ মানুষকে সে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ভূমি দখলও নিয়েছে। আমরা তার জুলুম থেকে মুক্তি চাই।’

ভূক্তভোগী পরিমল সিকদার বলেন, ‘২০১৬ প্রকৃতি রঞ্জন দত্ত প্রকাশ সোনা বাবু নামে একজনের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ গন্ডা জায়গা ক্রয় করে বাউন্ডারি দিচ্ছিলাম। তখন প্রদীপ আমাকে বাধা দেয়। পরে সে চিফ জুডিশিয়াল আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, মন্দির ভেঙে ওয়াল নির্মাণ করছি। আদালত আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। তখন এসআই নুরুল করিম এসে তদন্ত করে রিপোর্ট দেন। এরপর আদালত মামলা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রদীপ তার উঠানের মন্দিরের মুর্তি ভাংচুরের ঘটনায় আমাদের জড়িয়ে মামলা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে প্রদীপের বাড়ির দূরত্ব আধা কিলোমিটার। আমি নাকি আমার পরিবার নিয়ে মন্দিরের মূর্তি ভেঙ্গেছি। আমি একজন হিন্দু সম্প্রাদায়ের সাধু। আমি নিজেই মন্দিরের পূর্জা করি। বিভিন্ন এলাকায় মন্দি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহযোগিতাও করি। আমি কি করে মন্দিরের মূর্তি ভাংচুর করি? মামলাবাজ ভূমিদস্যূ প্রদীপের ভয়ে এলাকায় কেউ কথা বলে না। প্রদীপের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রদীপ দত্ত মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন গাড়িতে আছি। আপনার সাথে এখন কথা বলতে পারব না। পরে বসে কথা বলবো।’

আনোয়ারা উপজেলা পূর্জা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুগ্রীব মজুমদার দোলন জানান, মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা হওয়ার পর দুই পক্ষ ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে দেখার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর ও এডভোকেট হরিপত্ত চক্রবর্তীসহ আমাকে দায়িত্ব দেন মন্ত্রী মহোদয়। আমরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে বুঝতে পারলাম মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের ঘটনাটি সাজানো। তাদের দুই পক্ষের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। সে বিরোধের জেরে এগুলো করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি পরির্দশন শেষে আনোয়ারা থানার ওসিকে জানানোর পর তিনি প্রদীপের মামলা নেননি। কিন্তু সে আদালতে গিয়ে মামলাটি করে। মন্ত্রী মহোদয় দেশে ফিরলে আমরা বসে সমাধান করে দেবো।’

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, কিছু লোক নিজেরা মূর্তি ভেঙে নিরীহ লোককে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে— একথা ঠিক।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!