মুজিববর্ষে মোশতাক-তোষণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের!

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ডিজিটাল মাইক্রোফোন

মুজিববর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর খুনের অন্যতম কুশীলব খন্দকার মোশতাক আহমেদের ছবিও এঁকেছে। যা নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী পরিবার ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ক্ষোভে ফুঁসছে। অন্যদিকে অস্থায়ী ম্যুর‌ালে বক্তব্যদানরত বঙ্গবন্ধুর সামনে অত্যাধুনিক ডিজিটাল মাইক্রোফোন সংযুক্ত করে পুরো বিষয়টিকেই হাস্যকর করে তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এসব ঘটনায় বঙ্গবন্ধু প্রেমিকরা ক্ষুব্ধ।

মুজিববর্ষকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মার্চের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ, টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেটগামী সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন দেওয়ালে জাতির জনকের সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন চিত্র আঁকার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফুল এহসান শাহ এ ঘটনায় বিশেষ কারও প্রতি ইঙ্গিত করে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি তাহার এতো দুর্বলতা কিংবা সখ্যতার কারণ কি?’

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীতে আজ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে খুনি মোশতাকের ছবি দেখতে হয়েছে তাঁর সাথে। অথচ এটি আঁকা হয়েছে একটি দায়িত্বশীল সংস্থার উদ্যোগে। এই ছবি দেখে আমাদের মনে হয়েছে এটি খুনিদের পুনর্বাসন করার একটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র।

খুনি মোশতাকের ছবিতে কালো কালি মেখে দেয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা
খুনি মোশতাকের ছবিতে কালো কালি মেখে দেয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা

ছাত্রলীগের এই নেতা আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে এই ষড়যন্ত্রে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বৃহত্তর আন্দোলন নামবে।

সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ সংলগ্ন মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দেওয়ালে আঁকা চিত্রে শিল্পীরা জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি অনুকরণ করেছেন। যাতে স্বদেশের মাটিতে পা রেখে জাতির জনক উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তাঁকে বরণ করতে আসা জনতার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে ছিলেন যুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। তাঁর পাশেই ফুলে সিক্ত বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর বামে সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সৈয়দ নজরুলের পাশেই দেখা যাচ্ছে মাথায় টুপি পরিহিত খন্দকার মোশতাক। মোশতাকের পাশেই জনতার হাত, পাশে আবার ৭ মার্চের আদলে বঙ্গবন্ধুর হাত। এই দেওয়াল চিত্রের শুরুতেই চসিকের লগো সম্বলিত ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন, মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ লিখা আছে। তার পাশে ‘১২ জানুয়ারি,’ ‘সোনার বাংলা ২৯২ দিন বাদে’ লেখা আছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘ছবিটি যারা এঁকেছেন তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছেন। মূলত কেউ ইনটেনশনালি খুনি মোশতাকের ছবি আঁকেননি। বিষয়টি ভুল হয়েছে। আমাদের নজরে আনার সাথে সাথেই আমরা মুছে দিয়েছি।’

আবার পুরো শহরে চসিক জাতির জনকের বিভিন্ন অস্থায়ী ম্যুর‌াল স্থাপন করেছে। ফ্লাইউডে স্টিকার লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চে ভাষণের ছবি দিয়ে সাজিয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সামনে অত্যাধুনিক ডিজিটাল মাইক্রোফোন সংযুক্ত করেছে। তাই বঙ্গবন্ধু প্রেমিকরা ক্ষুব্ধ।

এই ছবি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন লিখেছেন, হায়রে শ্রদ্ধা! চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণরত একটি প্রতিকৃতির ছবি দিয়েছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু ছবির ভাষণে যে মাইক্রোফোনটি দেখানো হয়েছে সে সময় কি এই ডিজিটাল মাইক্রোফোন ছিল? প্রতিকৃতির ছবিটি কি করার সময় কতৃপক্ষ বিষয়টি দেখেননি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করে ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র করা হয়েছে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

এদিকে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলসহ ওসব চিত্রকর্মে থাকা খুনি মোশতাক আহমেদের ছবিতে কালো কালি মেখে দেয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠনের সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর পরপরই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে তা মুছে দেওয়া হয়।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!