মুজিববর্ষে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটাররা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২০ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করে ব্যাপকভাবে উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে দেশি-বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে থাকবে ব্যাপক আয়োজন। মুজিব বর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হবে আগামী ১০ জানুয়ারি। এর তিন দিন পরই চট্টগ্রাম-৮ আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপনির্বাচন।

অতীত অভিজ্ঞতার কথা সুখকর নয় জানিয়ে তাদের মনে ভর করছে নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কি না? এরপরও সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারাও বলছেন, নির্বাচন কমিশন ঐতিহাসিক বছরটিতে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রী ও মেয়রের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির প্রার্থী। সবমিলিয়ে এখনও ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা সেই শঙ্কা রয়েছে ভোটার থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের মাঝে। তবে কে কী মনে করছেন সেটা আমলে না নিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সমাজকর্মী বিষু রায় চৌধুরী নামের বোয়ালখালীর বেঙ্গুরা এলাকার এক অধিবাসী বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রতিবারই। সরকারের হাতে সুযোগ আছে একটি সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শুরু হচ্ছে সরকার ঘোষিত মুজিব বর্ষ। আমাদের প্রত্যাশা মুজিব বর্ষ কোন অনিয়মের নির্বাচনের কারণে কলঙ্কিত হবে না।’

মো. ইয়াছিন চৌধুরী নামের বোয়ালখালীর এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের স্মার্টকার্ড নেই, আমরা ভোট দিবো প্রিসাইডিং অফিসারের করুণানির্ভর হয়ে। তার ওপর ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে বোয়ালখালীবাসীর কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই। কিভাবে কী হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবুও আমরা চাই মুজিব বর্ষে কোন অনিয়মের নির্বাচন না হোক।’

বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, ‘জাতির জনকের সম্মানে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছি। ঠিক সেই সময়টাতে আমার এলাকায় উপনির্বাচন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তারপর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সরকারের ব্যাপক আয়োজনের এই শুভক্ষণটি কোনভাবে বিতর্ক যেন জন্ম না দেয় সেই পদক্ষেপ গ্রহণই সরকার গ্রহণ করবে বলে আমার প্রত্যাশা। কারণ এই একটি সংসদীয় আসন নিয়ে সরকার কেন নিজেদের ভাবমূর্তিতে দাগ পড়তে দিবে? আমার মনে হয় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সরকারদলীয় চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু বলেন, ‘মুজিববর্ষের শুরুতে এই এলাকায় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদের উপহার দেবে বলেই আমার বিশ্বাস।’

চান্দাগাঁও শমসেরপাড়ার ব্যবসায়ী শাহাদাত আশ্রাফ বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা উৎসবমূখর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার পরিবেশটা নিশ্চিত করবে সরকার। কোন রকম বিতর্ক জন্ম দিবে না। জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে।’

নগরীর বহদ্দারহাটের তরকারি বিক্রেতা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন কেমন হয়েছে তাতো দেখেছেনই। সরকারের মর্জি হলে আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো। ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে আমরা আমাদের পছন্দের ব্যক্তিকে সংসদে পাঠাতে পারবো। তিনি জনগণের কথা বলবেন। সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।’

নগরীর বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজনের কথাবার্তায় আমরা কিছু সন্দিহান। তারা হয়তো আরেকটা প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে।’

চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ও চসিকের মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন কেমন হয়েছে সেটা দেশবাসী সকলেই অবগত। মুজিব বর্ষের শুরুতেই আমাদের আসনে যে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আশা করছি সেটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাতে পারে। এককথায় আগের রাতে নয়, দিনের বেলায় ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ চায় জনগণ।’

চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। নির্বাচনকে কোনভাবেই প্রভাবিত না করার জন্য দলীয় নির্দেশনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমিও চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে একটি সুষ্ঠ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে কেউ যদি স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করেন বা করতে চান সেটা যার যার বিষয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ওই বিশৃঙ্খলার দায় নিবে না, নিতে পারে না। নির্বাচন কমিশনও এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ আচরণ করছে। আমিও আশা করি মুজিববর্ষের শুরুতে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন রাজনীতির সুযোগ না পাক।’

ধানের শীষের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে মিডনাইট নির্বাচনের কারণে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। প্রচারণায় গেলে ভোটাররা বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা জানতে চান আদৌ ভোট দিতে পারবে কিনা। সাধারণের মতো আমাদেরও শঙ্কা গতবারের মতো কি রাতেই ভোট চুরি হয়ে যাবে? এরপরও আমি আশা রাখব মুজিববর্ষ ও ঢাকা সিটি নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না সরকার।’

এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার হাতে রক্তের দাগ নেই। সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়, ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে চাই। আমি সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেছি। আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেছি। ২৭ বছর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আখতারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।’

জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘কে কী মনে করছেন আর ভাবছেন তা আমাদের কাছে মূখ্য নয়। আমাদের কাছে এখন একটি মাত্রই লক্ষ্য উপনির্বাচনটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করা। এসব চিন্তার বাইরে আমাদের আর কোনও মাথায় নেই। নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করতে যা যা করার তা-ই করবো।’

এফএম/এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!