মিমি সুপার মার্কেটে ভ্যাট নিয়ে সেই টাকা নিজেরাই হাতিয়ে নেয়

গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ভ্যাটের সেই টাকা যায় না সরকারের কাছে। অনেকে আবার ভ্যাট নিবন্ধনের ধারই ধারেনি। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের নামি শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটে গোপন জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য জানতে পারলো এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দারা।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) এমন অরাজক অবস্থা দেখে মিমি সুপার মার্কেটের ২০৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদে অবস্থিত মিমি সুপার মার্কেটে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনই নেয়নি। কেউ কেউ নিবন্ধন নিলেও আইন অনুযায়ী ভ্যাটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। সবমিলিয়ে ওই মার্কেটে মোট প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৬৩টি। এর মধ্যে নতুন ভ্যাট আইনে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৬০টি প্রতিষ্ঠান। বাকি ২০৩টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের নিবন্ধন তো নেয়ইনি, গ্রাহকের কাছ ভ্যাট আদায় করলেও সেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নিজেরাই। এদের অনেকে আবার পণ্য আমদানির সঙ্গেও জড়িত।

ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিমি সুপার মার্কেটের ৬০টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন থাকলেও প্রকৃতপক্ষে যে পরিমাণ বিক্রি তাদের, সে অনুযায়ী রিটার্ন ও ভ্যাট পরিশোধ করে না। এর মধ্যে আবার ভ্যাট সনদ ঝুলিয়ে রাখতে গেছে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানকে। বাকিরা তার ধারই ধারেনি। অথচ ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।

এমন অরাজক অবস্থা দেখে মিমি সুপার মার্কেটের ২০৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। অন্যদিকে যে ৫০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সনদ ঝুলিয়ে রাখেনি, ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও।
ভ্যাট আইনে দায়ের করা ২৫৩টি মামলা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— তুলি শাড়ী, পিন্ধন, নিউ আঁচল, আদরী, অপরূপা শাড়ী, মহসিন’স, মিস আর্ট, ফ্যামিলি ফুড, আল আয়েশা বোরকা, মিউজিক ক্লাব, ড্রিম গার্ডেন, আয়শা বোরকা ফ্যাশন, ইউটেন সিকো, জেএম স্টোর, ঠুমরী, লাইসিয়াম, মিমি জুয়েলার্স, অন্যন্যা, অংকুর, আফগান বোরকা, নিউ মডার্ন মাহী জুয়েলার্স, তুর্কি ফ্যাশন ১, তুর্কি ফ্যাশন ২, নিউ তুর্কি ফ্যাশন, আরা, নিউ কনক বাহার জুয়েলার্স ১, নিউ কনক বাহার জুয়েলার্স ২, বনরূপা জুয়েলার্স, রূপমহল জুয়েলার্স, মোহনা জুয়েলার্স, তরঙ্গ জুয়েলার্স, মদিনা বোরকা, আল ফারিয়াল জুয়েলার্স, ভিক্টোরিয়া, সাফা ফ্যাশন, নিউ কনক বাহার জুয়েলার্স ৩, কাশ্মির ফ্যাশন, মিনি ইন্ডিয়া, এসপি আশালতা জুয়েলার্স, আল ফ্যাশন জুয়েলার্স, নিউ কনক মালা জুয়েলার্স, সন্দ্বীপ জুয়েলার্স, আরব জুয়েলার্স, হুজুরের দোকান ১, বধুবরণ জুয়েলার্স, টাইম স্কয়ার, জেমস গ্যালারি, ব্লু স্টোন, পূরবী জুয়েলার্স, আইসি, আল মদিনা বোরকা, অঙ্গনা, কটন ইন, স্টেপ ইন, লেডিস গ্যালেরি, রেভলন, চ্যালিস, হিপস্ ওয়্যার, কে রহমান কালেকশন, পপস্ টেইলার্স, হিজাব ১, হিজাব ২, কিডস্ এন্ড পপস, আর এক্স সুজ, আল মালেক ১, আল মালেক ২, বো-বে, সু-ডেইজি, গার্লী সুজ, এমকে কালেকশন ১, আর এক্স সুজ, এম কে কালেকশন ২, এক্সক্লুসিভ প্লাস, ফ্যাশন কালেকশন, সু গ্যালারি, ইউর চয়েস, হিল টুটু, নেক্সট কালেকশন, লোটাস, ফ্যাশন ফেয়ার।

ভ্যাট আইনে মামলার জালে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে— নিউ অনন্ত সুজ, সু এক্সপ্রেস, রাবা সুজ, তৃষা টেইলার্স, পাপ্পু টেইলার্স, কমপ্লিটম্যান ১, মেসার্স অনিক্স, হুজুরের দোকান ২, শৈশব, চেনাসুর, হান্টার চয়েস, দি সেল হাউজ, রবিন সুজ, পারি, কমপ্লিটম্যান ২, পেন্টালোনস, মিনিমুন, স্টাইল কালেকশন, শুচি, থাইসপ, ওপাল হাউজ ১, ওপাল হাউজ ২, স্প্যালাস, আরিজা, ম্যাক, রং বে রং, নিউ চ্যান্সেলর, চলতি ফ্যাশন, মিমি লেডিস টেইলার্স, রিয়া টেইলার্স, ড্রাগন মার্ট, হুজুরের দোকান ৩, জেলোজিয়া, আবির লেডিস টেইলার্স, নেক্সটেল, প্রাবন টেইলার্স, পেন্ট ফেয়ার, প্রাইম স্টোর, ফেয়ারী লেডিস টেইলার্স, অপ্সরা ফ্যাশন হাউজ, অর্চনা, প্রিয়া টেইলার্স, ললনা টেইলার্স, কারেন্ট বুক সেন্টার, গ্লিমস, প্রেনা টেইলার্স, মায়াবী ফ্যাশন, আলো ফ্যাশন, রুৎমিলা, সাগর টেইলার্স, এম এম টেইলার্স, নিউ কৃষ্ণা টেইলার্স, নকশী টেইলার্স, নিউ মাস্টার টেইলার্স, রিমিক্স টেইলার্স, মিতা স্টোর, আফগান বোরকা, অনিক টেইলার্স, শাওন মনি, অঙ্গসাজ টেইলার্স, সানি টেইলার্স, অন্তর টেইলার্স, পুতুল টেইলার্স, দেবদুত লেডিস টেইলার্স, মেসার্স আঁচল, মেসার্স তন্বী, হ্যাপী টেইলার্স, নাহার আই টি পার্ক, স্টার অন্তর টেইলার্স, নিউ প্রিয়া টেইলার্স, আশরাফিয়া টেইলার্স, উইং প্লেনেট, পূরবী জুয়েলার্স ১, পূরবী জুয়েলার্স ২, পরী লেডিস টেইলার্স, চৌধুরি লেডিস টেইলার্স, তুর্কি ফ্যাশন, নোহা লেডিস টেইলার্স, জৈতা টেইলার্স, শান্তা লেডিস টেইলার্স, মিতা স্টোর, মীম ফ্যাশন, নিউ মনি, অঙ্গনা টেইলার্স।

ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনিবন্ধিত ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি ব্যবসার শুরু থেকে তাদের প্রকৃত খরচের ভিত্তিতে আগে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট হিসাব করে বকেয়া ও মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদসহ জরিমানা আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সিপি