মিনুর ঘটনায় চট্টগ্রামের দুই পুলিশকে ডেকেছেন হাইকোর্ট

চট্টগ্রামের তিন আইনজীবীও থাকবেন ভার্চুয়ালি

চট্টগ্রামে অন্যের হয়ে তিন বছর জেল খাটা এবং মুক্তির ১২ দিন পর নিরপরাধ সেই মিনু আক্তারের ‘রহস্যজনভাবে’ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলা তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে হাইকোর্টে।

এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই খোরশেদ আলম এবং কোতোয়ালী থানার এসআই মো. জুবায়ের মৃধা। ১ সেপ্টেম্বর দুজনকেই ওই দুই মামলার নথিসহ (সিডি) হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ আগস্ট) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। অপরপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী ও অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন।

এদিকে মিনুর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির।

এর আগে গত ২৮ জুন দেশের সকল কারাগারে প্রকৃত আসামি সনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ডাটা পদ্ধতি চালু করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব (লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ) ও কারা মহাপরিদর্শককে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, মোবাইল ফোন নিয়ে বিবাদের জের ধরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় পোশাক কারখানার কর্মী কোহিনুর বেগম খুন হন। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উপজেলার গৌরস্থান মাঝেরপাড়া গ্রামের আনু মিয়ার মেয়ে কুলসুমীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বামীর নাম ছালেহ আহমদ। তিনি স্বামীর সঙ্গে কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জে সাঈদ ডাক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুমী। পরবর্তীতে এ মামলায় বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এক রায়ে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ের দিন কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।

এর পর ভাসমান বস্তিতে মিনুকে পান কুলসুমী। মিনুর স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে ভাসমান বস্তিতে থাকতেন। মিনুর বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর জাফারাবাদ এলাকায়। তাঁর পিতার নাম সোলাইমান ও মা সালেহ বেগম, স্বামী মোহাম্মদ বাবুল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতিতে। সন্তানের ভরণ পোষণের লোভ দেখিয়ে তাকে কুলসুমীর হয়ে জেলে পাঠানো হয়। মিনু কুলসুমীর কথায় রাজি হয়ে কুলসুমী সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে মিনু কারাবন্দি। পরে বিষয়টি এডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদের নজরে এলে তিনি আদালতে উপস্থাপনে আইনি সহায়তায় ১৬ জুন তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। তবে মুক্তির পরে মুক্ত জীবনে ১২ দিনের বেশি মুক্ত পৃথিবীতে বাচঁতে পারেননি সেই মিনু। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হতে হয়েছে।

জানা গেছে নিহত মিনু সীতাকুন্ড এলাকা থেকে সন্তানকে মাদ্রাসায় দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। নিখোজের ৫ দিন পর ছবি দেখে স্বজনেরা জানতে পারেন মিনু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর মারা গেছে। তবে স্বজনেরা লাশটুকুও দেখতে পারেনি। জানে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। এ ঘটনায় ২৯ জুন একটি অপমৃত্যু মামলা হয় চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায়। এই মামলা তদন্ত করছেন এসআই খোরশেদ আলম।

অন্যদিকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি কুলসুমী আক্তার, তার সহযোগী মর্জিনা আক্তার ও কাওয়ালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। নিজের পরিবর্তে মিনুকে কারাগারে পাঠানো, আদালতের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে কুলসুমীসহ অপরাপর আসামির বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালি থানায় পুলিশ পৃথক একটি মামলা করে। এই মামলা তদন্ত করছেন এসআই মো. জুবায়ের মৃধা।

এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকেই তলব করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া মামলা সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের তিন আইনজীবী ও একজন সহকারীকে ওইদিন আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!