মিতু খুনে বাবুলের ‘প্রেমিকা’ গায়ত্রী সম্পর্কে যা জানালো জাতিসংঘ সংস্থা

দুই মাস পর এলো চিঠির জবাব

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যাকাণ্ডে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক ও জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমর সিংয়ের নাম আসার পর তার সম্পর্কে জানতে গত ২৩ মে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) চিঠি দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুই মাস পর কয়েকদিন আগে সেই চিঠির উত্তর পেলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

গায়ত্রীর ব্যাপারে যা যা চাওয়া হয়েছে, সব তথ্যই ইউএনএইচসিআর দিয়েছে— এমন কথা চট্টগ্রামের পিবিআই কর্মকর্তারা জানালেও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রকাশ করতে তারা নারাজ।

পিবিআই সূত্র শুধু জানাচ্ছে, ইউএনএইচসিআর এটি নিশ্চিত করেছে যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার (প্রটেকশন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন গায়ত্রী অমর সিং। ফিরতি চিঠিতে সংস্থাটি এও জানিয়েছে, গায়ত্রী এখন আর ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে যুক্ত নেই। তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি চিঠিতে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর আগে জানা গিয়েছিল, গায়ত্রী অমর সিং সর্বশেষ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে ছিলেন। সেখানেও তিনি ইউএনএইচসিআর-এর লিগ্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন।

জানা যায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বাবুল আক্তারের সাথে ২০১৩ সালে পরিচয় হয় সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা গায়ত্রী অমরসিংয়ের। একসময় সেই গায়ত্রীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার। একসময় সেই খবর পৌঁছে যায় স্ত্রী মিতুর কানেও। শুরু হয় অশান্তির ঢেউ। এই প্রণয়ের জের ধরেই প্রাণ গেল বাবুলপত্নী মিতুর। ইতি ঘটে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের ক্যারিয়ারেরও।

কে এই গায়ত্রী? মিতু হত্যার ঘটনায় মিতুর পিতা মোশাররফ হোসেনের করা নতুন মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গায়ত্রী অমর সিং একজন ভারতীয় নাগরিক। তিনি জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার—ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন কক্সবাজারে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকাকালে প্রথমবার গায়ত্রীর সাথে বাবুলের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন স্ত্রী মাহমুদা মিতু। ওই সময় বাবুল আক্তার তার মোবাইলের সিমটি দেশে রেখে যান। আর বিভিন্ন সময়ে গায়ত্রী মোট ২৯টি এসএমএস পাঠান বাবুল আক্তারের সিমে। পরে প্রতিটি এসএমএসই হাতে লিখে নোট করে রাখেন মিতু।

এছাড়া বাবুল আক্তারকে গায়ত্রীর উপহার দেওয়া দুটি বই ‘TALIBAN’ ও ‘Best kept secret’ নামে দুটো বইও হাতে আসে মিতুর।

যার মধ্যে ‘TALIBAN’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পাতায় বাবুল আক্তার নিজ হাতে গায়ত্রীর সাথে পরিচয় ও সম্পর্কের নানা খুঁটিনাটি তথ্য নোট করে রাখেন।

সেই নোট অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গায়ত্রীর সাথে প্রথম দেখা হয় বাবুলের। একে অপরকে প্রথমবার চুমো খান ৫ অক্টোবর। এর দুদিন পর ৭ অক্টোবর দুজনের মধ্যে প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়। দুজনে প্রথমবারের মত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঁটেন ৮ অক্টোবর। এসব তথ্যের সাথে ১০ অক্টোবর গায়ত্রীর জন্মদিনের তথ্যও ওই পাতায় নোট করে রাখেন বাবুল আক্তার।

বাবুলের স্ত্রী মিতুর পিতা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গত ১২ মে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, মিতুকে হত্যার আগে গায়ত্রীর মুঠোফোন থেকে মিতুকে এসএমএস করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

তবে নতুন মামলায় গায়ত্রীকে আসামি করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন,‘তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু এই হত্যা প্রক্রিয়ার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন কি-না তা আমাদের জানা নেই। হুমকির বিষয়টি এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তদন্ত কর্মকর্তাই আসামি হিসেবে তার নাম যোগ করতে পারবেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!