মা-বোন পিটিয়ে জেলে গেলেন চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা

এলাকায় তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত, নিজেকে পরিচয় দেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে। এলাকার মানুষজনকে হুমকি দেওয়া ছাড়াও বেপরোয়া চাঁদাবাজি— এমন সব অপকর্মে অতিষ্ঠ মানুষ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ অনেক মামলাও। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক কেএম আব্বাস। অভিযোগ রয়েছে ইয়াবা ব্যবসার টাকা ঢেলে এই পদে এসেছেন তিনি।

সবকিছু ছাপিয়ে তিনি এবার করলেন আরেক কাণ্ড। ইয়াবা সেবন করে মাতাল হয়ে নিজের জন্মদাতা মা এবং বড়বোনকে পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় তার বড় ভাই বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা খন্দকার পাড়ার আ ফ ম আব্দুল হামিদের ছেলে কেএম আব্বাস। অবিবাহিত আব্বাস মা, ভাই ও বোনসহ চান্দগাঁও আবাসিকের বি ব্লকের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। তার ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের খবর পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আব্বাস। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার জেলও খেটেছেন তিনি। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা এ আব্বাস নিজ পরিবারের লোকজনকেই নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে হুমকি দিয়ে আসছিলো।

সর্বশেষ নিজ পরিবারের লোকজন থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আপন ভাই, বোন ও মাকে মারধর করেন। তাদের হত্যার হুমকিও দেন। পরিবারের ওপর এমন অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ৪ জুলাই চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তারই বড় ভাই কেএম আক্কাছ। মামলায় আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

মামলার বাদি কেএম আক্কাছ বলেন, ‘সাতকানিয়ার আহমদু গ্রুপ থেকে আব্বাসের রাজনীতি শুরু হয়। সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে খারাপ পথে চলে যায়। ঘরে সবাইকে শাসন করে সে। সে আমার মা ও বোনকে মারধর করেছে। নিয়মিত আমাদের নানাভাবে মানসিক চাপ দেয়। সম্প্রতি আমার বড় বোনকে প্রচুর মারধর করেছে। ৩০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে সবাইকে খুন করবে বলে হুমকি দেয়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা থানায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য হই।’

তিনি বলেন, ‘আব্বাস বর্তমানে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অনেকগুলো মামলা আছে। তার কারণে আমরা সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে থাকি। রাজনীতির আড়ালে সে অনেক অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা হলে চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক আবুল বাশার মুন্সি বলেন, ‘আব্বাসের বড় ভাই থানায় এজাহার দিয়েছেন। সে পরিবারের লোকজনের ওপর অত্যাচার করতো। তার বোনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এজাহার অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে। বর্তমানে সে জেলে আছে। চার্জশিটে অন্যান্য মামলার বিষয় আনা হবে।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নিজের মা-বোনের ওপর হামলার এমন ঘটনা খুবই অমানবিক। যেহেতু ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আইনগতভাবে সেটার বিচার হবে। পরিবার থেকে যদি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসে, তখন আমরা সাংগঠনিক যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটা করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!