মা-বাবার ফেলে যাওয়া শিশুটির ঠাঁই হচ্ছে ছোটমনি নিবাসে

সন্তানের মুখে মা কিংবা বাবা ডাক শুনতে পৃথিবীজুড়েই হাজারও ত্যাগের গল্প প্রচলিত আছে। দশ মাস দশদিন পেটে ধারণ করে সন্তান প্রসবের পর সন্তানের চেহারা দেখেই সকল কষ্ট ভুলে যান মা। মায়ের দিগন্ত বিস্তৃত সীমাহীন ভালোবাসার গভীরতার কাছে আকাশ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, সমুদ্রও হেরে যায়, হেরে যায় সব সংকীর্ণতা। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ সম্পর্ক। মা-বাবা যতটা মুগ্ধ হন জোৎস্না রাতে চাঁদ-তারায় ভরা নীলাকাশ দেখে, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির রুপ দেখে কিংবা সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা দেখে তার চেয়ে অনেক বেশি তৃপ্ত হন সন্তানের মুখ দেখে।

কিন্তু জন্মের মাত্র দুই দিন পর সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে উধাও হয়ে গেছেন চট্টগ্রামের এক দম্পতি। দুই মাসেও সন্ধান মিলেনি ওই শিশুর পিতা-মাতার সন্তান। হাসপাতাল থেকে থানায় যোগাযোগ করা হলে চান্দগাঁও থানা শিশুটিকে আদালতে সোপর্দ করার হয়। আদালত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত সোনামনি নিবাসে শিশুটিকে লালন-পালনের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তার অভিভাবকদের খুঁজে বের করারও আদেশ দিয়েছেন চান্দগাঁও থানা পুলিশকে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমাদের থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। সেই ডায়েরিমূলে শিশুটিকে আজ মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সোপর্দ করি। মাননীয় বিচারক খায়রুল আমিন স্যার শিশুটিকে সোনামনি নিবাসে লালনপালনের আদেশ দেন। তার প্রকৃত অভিভাবকের সন্ধান করতেও আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন।

হাসপাতালের পক্ষ থেকে চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার সিএন্ডবি এলাকার রুপনা দে নামের এক প্রসুতি ভর্তি হন শমসের পাড়া এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে (সিআইএমসিএইচ)। ওই দিনই তিনি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। ২১ জুলাই নিজ কন্যা সন্তানকে হাসাপাতালে রেখে রুপনা দে উধাও হয়ে যান।

এ বিষয়ে সিআইএমসিএইচ-এর সিনিয়র এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আব্দুর রাজ্জাক খান জানান, ১৯ জুলাই শিশুটি জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পর থেকে শিশুটি অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালের এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকেই তার মা এবং অভিভাবককে আমরা আর পাইনি। টানা একসপ্তাহ এনআইসিইউতে চিকিৎসা শেষে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। আদালতে পাঠানো পর্যন্ত শিশুটিকে আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতালে লালনপালন করেছি। মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) পুলিশ এসে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে সোনামনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, অভিভাবকহীন শিশুর দায়িত্ব যদি কেউ নিতে চায় সেক্ষেত্রে আদালতে আবেদন করতে হয়। আদালত ওই ব্যক্তির শিশু লালনপালনের সক্ষমতা যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।

এফএম/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!