মা ও ভাইয়ের গায়ে স্ত্রীর হাত, সেই অপমানেই গুলিতে আত্মঘাতী এএসপি!

‘বউ যেন স্বর্ণ নিয়ে যায়, মা যেন ভালো থাকে’

সকালে মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিলেন স্ত্রী। হাত তোলার এমন ঘটনা মেনে নিতে না পেরে দুপুরেই চট্টগ্রামে ‘আত্মহত্যা’র পথ বেছে নিয়েছেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহা। এমন দাবি করেছেন আত্মঘাতী এএসপির বড় ভাই।

বুধবার (৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত র‍্যাব-৭-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট উদ্ধার হওয়ায় এটি আত্মহত্যা কি না, তা ঘিরে তদন্ত চলছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ‘এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ তার নিজ কার্যালয়ের কক্ষে পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করার কথা লেখা রয়েছে।’

মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিলেন স্ত্রী

এদিকে আত্মঘাতী এএসপি পলাশ সাহার মেজ ভাই নন্দ লাল সাহা বলেছেন, ‘দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিবাহ হয়। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকেই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করতো। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকতো— এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারতো না। সে সব সময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ দিতো। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইতো না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসতো।’

নন্দ লাল সাহা বলেন, ‘(বুধবার) সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।’

চিরকুটে যা লেখা ছিল

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা চিরকুটে লেখা ছিল— ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তাঁরা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।’

চিরকুটের ভাষা থেকে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে সন্দেহ করা হলেও পুলিশ ও র‍্যাব বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটি গুলির আঘাত কি না, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে র‍্যাব-৭-এর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি।

৩৭তম ব্যাচের ক্যাডার

গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা পলাশ সাহা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৭তম ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি র‍্যাব-৭-এ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন।

আত্মহত্যা না পরিকল্পিত কিছু?

পুলিশ ও র‍্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পলাশ সাহার মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত হতাশা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা চাকরিসংক্রান্ত কোনো চাপ ছিল কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিরকুটে ব্যক্তিগত দায় স্বীকার করলেও বিষয়টির পেছনে অন্য কোনো প্ররোচনা বা গাফিলতি ছিল কি না, সেটিও তদন্তাধীন।

চলছে খোঁজখবর

চট্টগ্রামের সিএমপি ও র‍্যাব যৌথভাবে ঘটনাটির তদন্তে কাজ করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বিস্তারিত জানাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জেজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm