মাশরাফিই কি হতে যাচ্ছেন সেই ‘আম্পায়ার’?

সোমবার জাতীয় দল ও প্রথম শ্রেণির অধিকাংশ ক্রিকেটার ১১ দফা দাবি দিয়ে তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট খেলা ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যাপার বয়কটের সিদ্ধান্ত জানান। সোমবার রাতেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের অফিসে জরুরিভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেন মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিসিবি অফিসে পরিচালকদের নিয়ে বসে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই আশায় ছিলেন বিসিবি থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা আসবে, সবগুলো না হলেও বেশিরভাগ। বিসিবির একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংবাদ সম্মেলনে দাবি পূরণের সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা না দিয়ে উল্টো ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন বিসিবি প্রধান। অথচ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ডের খেলা এবং শুক্রবারে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প। পাপনের বক্তব্য ‘খেলোয়াড়রা আসলে আসবে, না আসলে নাই’ টাইপের। কিন্তু তাঁর কথায় সমাধান আসেনি। বিসিবি সভাপতি অবশ্য বলছেন, ‘আমাদের দরজা খোলা আছে। তারা ফোন ধরছে না, কেটে দিচ্ছে। এখানে কী দাবি আছে যেটা আমাদের মানতে পারি না? তারা আমাদের কাছে আসে না কেন?’

বিসিবি বলছে, আগে তাদের সঙ্গে বসতে হবে। কথা বলতে হবে। এরপর ক্রিকেটারদের দাবিদাওয়া পূরণের বিষয়টি আসবে। বোর্ডের ডাকে সাড়া দিয়ে খেলোয়াড়েরা কি বসবেন বিসিবির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে? মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত এ প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি। শুধু এতটুকু জানা গেল, বিসিবি সভাপতি কী বলেন, তাঁরা সেটি শোনার অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল যে সব কথা বলেছেন বেশির ভাগই পছন্দ হয়নি ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি, এতে ভীষণ আহত বোধ করেছেন ক্রিকেটাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘আমরা শুধুই আমাদের ক্রিকেটীয় সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। এই দাবির সঙ্গে কেন এসব পারিবারিক-ব্যক্তিগত বিষয় আসবে? তিনি বোর্ডের অভিভাবক। বড় কোনো সমস্যা, বিপদে পড়লে তাঁর কাছেই তো জানাবে খেলোয়াড়েরা। তাই বলে সেগুলো জনসম্মুখে বলতে হবে!’

খেলোয়াড়েরা এখনো তাঁদের অবস্থানে অনড়। তবে কেউ কেউ আশাবাদী দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। বিসিবির বক্তব্য জানার পর এখন ক্রিকেটাররা কী করবেন সেটি কাল রাতে জানা যায়নি। বেশির ভাগ ক্রিকেটারই সংবাদমাধ্যম কিংবা বিসিবির কর্তাদের এড়িয়ে চলছেন। নিজেদের মধ্যে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বেশির ভাগই ফোন ধরছেন না কিংবা কথা বলতে চাইছেন না।

এ ঘটনায় বিসিবি আছে ভীষণ চাপে। কদিন পর ভারত সফর, সমস্যার সমাধান করতে হবে খুব দ্রুত। কিন্তু সমাধান হবে কীভাবে, সেটির পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় খেলোয়াড়দের শাস্তি দেওয়ার কথা উঠেছে পরশু বিসিবির কর্তাদের প্রথম বৈঠকে। তবে এটির বিপক্ষে মত জোরালো। খেলোয়াড়দের শাস্তি দিতে গেলে হিতে বিপরীত হবে বলে আপাতত এ বিষয়ে কিছু ভাবছে না। তবে ভবিষ্যতে যে শাস্তি দিতেও পারে, সেটির ইঙ্গিত ছিল নাজমুলের কথায়।

মাশরাফিকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী?

বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটাররদের এই লড়াইয়ের শেষ হবে কীভাবে এবং কার মাধ্যমে এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে বিভিন্নসূত্র নিশ্চিত করছে মাশরাফিকে দিয়েই সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে বিসিবি। মঙ্গলবার চলমান সংকট নিরসনের জন্য মাশরাফিকেই দায়িত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এক ফরম্যাটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাছাড়ামাশরাফির আরো এক পরিচয় আছে, তিনি একজন সংসদ সদস্যও বটে। বিসিবির সহ সভাপতি মাহবুব আনাম এই প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ডেকেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেছেন। এরপর মাশরাফিকে দায়িত্ব দিয়েছেন ক্রিকেটারদের মাঠে ফিরে আসার বার্তা দিতে।’

ইতোমধ্যেই মাশরাফি মারফত এই বার্তা পৌঁছে গেছে আন্দোলনরত ক্রিকেটারদের কাছে। বিসিবিও আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর বার্তাকে মূল্যায়ন করে মাঠে ফিরবেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটার ও বিসিবির পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিরসন করে দুই পক্ষকে এক করে ক্রিকেটাঙ্গন আবারো সচল করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পক্ষ হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!