উত্তপ্ত রাউজান/ মামলা-হামলায় মুনিরীয়াপন্থীরা ঘরছাড়া, নিরীহ লোক মামলায়
মুনিরীয়া যুব তবলীগ ও ‘সম্মিলিত সুন্নি জনতা’র মুখোমুখি অবস্থানে উত্তপ্ত রাউজান। মুনিরীয়া দরবারপন্থীরা দাবি করছেন মামলা, হামলা, হুমকি ও নির্বিচার গ্রেপ্তারে রাউজান এখন এক আতঙ্কের জনপদ। কাগতিয়া দরবারের সমর্থকদের এমনকি বাড়িতেও থাকতে দিচ্ছে না প্রতিপক্ষ। এই অবস্থায় অনেকেরই শঙ্কা যে কোন সময় বড় কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারে।
মুনিরীয়াপন্থীদের ৬ কোটি টাকা সম্পদের ক্ষতি
মুনিরীয়া যুব তবলীগের সহসভাপতি অধ্যাপক আবুল মনসুর বলেন, ‘পুরো রাউজান অশান্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটিকে সুকৌশলে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির সাথে সম্পৃক্ত লোকজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। কিছু দুস্কৃতিকারী আওয়ামী যুবলীগের ছত্রচ্ছায়ায় এ সকল ভাংচুরসহ বিশৃঙ্খলায় অংশগ্রহণ করছে।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘রাউজানজুড়ে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির ২৬টি তরিক্বতের খানকাহ্ (এবাদতখানা), ৪১টিরও বেশি বাড়িঘর ও কমপক্ষে ১৮টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা করে দুস্কৃতিকারীরা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। ভাঙচুর, চাঁদাবাজিসহ মোট ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা।’
হামলা ও ভাঙচুরের ব্যাপারে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়েত উল্ল্যাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘থানার কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তা দমন করা। কিন্তু হামলা বা লুটপাটের অভিযোগ থানায় আসলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে কারা সরালো সিসি ক্যামেরা?
শনিবার (২২ জুন) রাউজানে নোয়াপাড়ায় সম্মিলিত সুন্নি জনতার ব্যানারে সমাবেশ করে কাগতিয়া দরবার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার ও দরবারে অস্ত্র রয়েছে—বক্তাদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মুনিরীয়া যুব তবলীগের নেতা মো. ফোরকান অভিযোগ করেন, ‘কাগতিয়া দরবারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রাতের আঁধারে সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে নিয়েছে একটি পক্ষ। ‘প্রশাসনের লোক’ দাবি করে এ কাজটি করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে শূন্য দরবারে যদি কেউ অবৈধ কোন কিছু রেখে প্রশাসনকে ডেকে কোন নাটকও সাজায় তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’
এ ব্যাপারে রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে এরকম কোন তথ্য নেই। তবে এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করার পর ওই জায়গার মালিক আপত্তি দিয়েছিল বলে শুনেছি।’
এদিকে কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসার এক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, ‘কাগতিয়া দরবারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সুন্নি জনতার ব্যানারে ২৪ জুন মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মুদারেসিনের মাধ্যমে এতে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বাধতামূলক করা হয়।’
মামলায় জড়ানো হচ্ছে নিরীহ লোককে
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাগতিয়া দরবারপন্থীদের নামে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে প্রতিপক্ষ। এর মধ্যে সম্প্রতি দায়ের করা একটি মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা উচ্চ আদালতে জামিনে থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নাঈম উদ্দিন খান, মাওলানা মো. ফোরকান, আজিম উদ্দিন খান, শাহেদ খান, সোহরাব হোসেন চৌধুরী রিগান, মোহাম্মদ আলী ও ইফিল চৌধুরী। এদের মধ্যে তিনজন ব্যাংকার ও একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার এবং অপর তিনজন ব্যবসায়ী।
রাউজান থানা পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে সাতজনকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা এখন রাউজান থানা হেফাজতে আছেন বলে জানিয়েছেন রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্যাহ। এদিকে রিমান্ডে আনা সাতজনের পরিবারই পুলিশী নির্যাতনের ভয়ে শংকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিরোধের শুরু যেভাবে
জানা যায়, ১৭ এপ্রিল ৭ নম্বর রাউজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হকের সাথে মুহাম্মদপুর এলাকায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীর হাতাহাতি ও একপর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। ওই ঘটনার পর থেকেই পুরো রাউজান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ঘটনার পরপরই কাগতিয়া দরবার এবং মুনিরীয়া যুব তবলীগ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে আসছিল। কিন্তু বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মামলা-হামলা-হুমকির ভয়ে মুনিরীয়া যুব তবলীগপন্থীরা রাউজানছাড়া।