মাফ করার পরও চবিতে নেওয়া হচ্ছে আবাসন ও পরিবহন ফি

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহন ও আবাসন ফি নেওয়া হবে না— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও ঠিকই আদায় করা হচ্ছে ওই টাকা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের দুই মাস পরও আগের মতোই ফি আদায় করায় শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) ও সিন্ডিকেটের ৫৭ তম যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষার্থীদের থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরের পরিবহন ও আবাসন ফি নেওয়া হবে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত হওয়ার দুই মাস পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বরাবরের মতোই আদায় করা হচ্ছে এই দুই ফি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ফি আদায় বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শীঘ্রই নোটিশ দিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

জানা যায়, গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শ্রেণি কার্যক্রম। একই সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় আবাসিক হল ও শিক্ষার্থীদের শাটল ট্রেনও। এরপর দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে বন্ধ অবস্থাতেই আছে সব কিছু। এ সময় শিক্ষার্থীরা একদিনের জন্যও আবাসন, পরিবহন, লাইব্রেরিসহ কোন ধরনের সুবিধা না নিলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সব ধরনের ফি আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৭ জুন সিন্ডিকেট সভায় এক বছরের পরিবহন ও আবাসন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়।

সিন্ডিকেটের ওই সভার ১ এর ‘ছ’ নং সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ মহামারী বিস্তারের কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি বিধিনিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, শাটল ট্রেন ও শিক্ষার্থীদের পরিবহন বাস বন্ধ ছিল বিধায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হল ভাড়া, শাটল ট্রেন/পরিবহন বাবদ নির্ধারিত অর্থ মওকুফ করা হোক এবং কোনো শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে উক্ত ফি জমা করে থাকলে তা সমন্বয় করা হোক।

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত দুই মাসেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘১৭ মাস ধরে তো সবকিছুই বন্ধ। আমরা একদিনের জন্যও ক্যাম্পাসের কোন সুবিধা ভোগ করি নাই। যেখানে আমাদের জন্য এক টাকাও খরচ হচ্ছে না, সেখানে কেন আমাদের থেকে সব আদায় করা হচ্ছে? অবিলম্বে সব ফি আদায় বন্ধ করা হোক।’

আরবি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল মুকাদ্দিম বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের দুই মাস পরও আগের মতোই ফি নেওয়া হচ্ছে। আমরা যারা আগে দিয়ে দিছি তাদের টাকার কী হবে— সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাহলে ফি মওকুফের বিষয়টা কি আইওয়াশ ছিল?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তারপর থেকে একদিনের জন্য হলেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ব্যবহার করিনি। এমনকি আমরা যারা আবাসিক শিক্ষার্থী আছি তারা হলেও থাকতে পারিনি। যদিও কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবহন ও আবাসিক ফি মওকুফের কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের ২য় বর্ষের ভর্তি ফি বাবদ এখন আবাসিক ফি সহ ২ হাজার ১১৮ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফি যদি নেওয়াই হয় তাহলে প্রশাসনের এই আশ্বাস দেওয়ার তো কোনো দরকারই নেই। এখানে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পড়ালেখা করে। তাদের পক্ষে তো এটা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে এখন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের পরিবহন ও আবাসন ফি মওকুফ করা হয়েছে। যারা এই ফি দিয়ে ফেলেছে তাদের থেকে আগামী অর্থবছরে এই টাকা সমন্বয় করা হবে। আর স্টুডেন্ট সেলে যদি এই টাকা এখনও নিয়ে থাকে, তাহলে আমাকে জানালে আমি দেখবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘ফাইন্যান্স কমিটি সিন্ডিকেটে পরিবহন ও আবাসন ফি মওকুফ করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা আমরা সব জায়গায় নোটিশ আকারে পাঠিয়ে দেবো। যাদের থেকে কর্তন করা হয়েছে তাদের হয় ফেরত দেওয়া হবে, না হয় পরবর্তী বছর সমন্বয় করা হবে। তবে বাকি অন্যান্য ফি এর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দেকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!