মানুষের আগ্রহে পানি ঢেলে দিচ্ছে আয়কর মেলার দুর্ভোগ

নিজ দায়িত্বে এসেও কর দিতে পারেননি অনেক করদাতা। দূর থেকে এসে করদাতারা পোহাচ্ছেন নানা দুর্ভোগ— এমন অভিযোগ পাওয়া গেল আয়কর মেলায় আসা করদাতাদের কাছ থেকে।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) থেকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চলছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নতুন ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, রিটার্ন দাখিলসহ সব আয়কর সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু হয় এই মেলা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আয়কর মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে করদাতাদের ভিড় থাকলেও কর্মকর্তার সংখ্যা কম। হেল্প ডেস্কে ৬০ জন কর্মকর্তার সাথে কর অঞ্চল সব শাখার কর্মকর্তা থাকলেও করদাতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম অবস্থা।

দেশে প্রতি বছর করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। করদাতাদের শান্তিপূর্ণ কর দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি আয়কর মেলার আহ্বায়ক কমিটি।

ষাটোর্ধ্ব জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার হাতের কব্জি ফুলে গেছে। ডাক্তার কোন প্রকার কাজ বা লেখালেখি করতে মানা করেছেন। আয়কর মেলায় আমি একাই এসেছি। আশা করেছিলাম কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাব। কিন্তু আয়কর মেলায় এসে আমার ফরমটাও পর্যন্ত পূরণ করাতে পারছি না। উল্টো তাদের অনেক কাজ আছে— জানিয়ে ওখান থেকে সরে যেতে বলে।’

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আয়কর মেলায় সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা বুথ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগটা পাচ্ছি না। পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এই বয়সে এসে এমন আচরণ আশা করিনি। বয়সের সাথে যুদ্ধ করে আয়কর মেলায় এসে যদি এমন হয়রানি হতে হয় তার চেয়ে বড়ো দুঃখ আর কী আছে?’

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা প্রবীণ কুমার বলেন, ‘ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। কর দেওয়ার মত কেউ না থাকায় অসুস্থ শরীর নিয়েই কর মেলায় আসি। কারো সহযোগিতা তো দূরের কথা উল্টো হয়রানির শিকার হতে হল।’

চট্টগ্রামে চলছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা।
চট্টগ্রামে চলছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা।

ঢাকার বাসিন্দা নাজমিন খানম দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রামে বসবাসের সুবাদে আয়কর রেজিস্ট্রেশন চট্টগ্রাম থেকে হয়। সুদূর ঢাকা থেকে কর দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম এসে বিভিন্ন হয়রানিতে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘করদাতাদের এতো ভিড়, কিন্তু সেই তুলনায় কর কর্মকর্তা খুবই কম। আমি ১২টায় ফরম জমা দিয়েছি এখন ২টা বাজে। এখন পর্যন্ত আমার সিরিয়াল আসেনি। ৩-৪টার দিকে সিরিয়াল পাব বলে কর্মকর্তারা বলেছেন। ৪টায় আমার ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি এখনও আয়কর মেলায় বসে আছি।’

একজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কর দিতে এসে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। কর কর্মকর্তাদের আচরণে মনে হয় আমরা কর দিতে আসাতে ওনাদের অনেকে বিরক্ত হচ্ছেন। কর মেলায় আসলে বিরক্তবোধ হন। অফিসে কর দিতে গেলে নিজেদেরকে তখন ভিআইপি অফিস মনে করে যা-তা ব্যবহার করেন। আবার তারাই বলে করদাতা সংখ্যা বাড়ে না কেন? এমন হয়রানি শিকার হতে হয় সেজন্য অনেকে সামর্থ্য থাকার পরও কর দিতে একটু অনীহা বোধ করে। কর দিতে এসে ৩-৪ টা হয়ে যাওয়ার পরও কর দিতে পারছি না।’

এ বিষয়ে রেঞ্জ-১ কর অঞ্চল-৩ চট্টগ্রাম অতিরিক্ত কমিশনার হেমল দেওয়ানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আশ্চর্যজনকভাবে আজকে করদাতার সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। আমাদের লোকবল সংকটের জন্য করদাতাদের একটু হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা আজকেই অতিরিক্ত লোকবল বৃদ্ধি করে সমস্যা সমাধান করব।’

সিনিয়র সিটিজেনদের হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাথে সাথে সিনিয়র সিটিজেন বুথে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বারবারই উঠে এসেছে, মেলার মাধ্যমে সব স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় এবং দেশে চলমান মেগা প্রকল্পে অর্থায়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখার আহ্বান করা হয়।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!