‘মাত্র ১০ টাকায়’—নগরের দামি জায়গা ভাড়ায় দিলেন চসিক প্রশাসক সুজন

এত কম দামে দোকান ভাড়া দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন

চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম কে সি দে সড়ক এলাকা। ওই সড়কের পরিত্যক্ত একখণ্ড জায়গার সঙ্গে ফুটপাতের ৩৭৬ বর্গফুট জায়গা সম্প্রতি ভাড়া দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অবিশ্বাস্য হলেও জায়গাটির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা!

দরপত্রের মাধ্যমে এ জায়গার ভাড়া পাইয়ে দিতে প্রচারবিহীন একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয় চসিক। পরে দরপত্রটি পেয়েছেন জানে আলম নামের এক ঠিকাদার। দরপত্র পাওয়া ঠিকাদার বিদায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগ উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম না মেনে নামমাত্র মূল্যে নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকায় এত কম দামে দোকান ভাড়া দেওয়ায় সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই! চসিক প্রশাসক বিদায় নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই জায়গাটি ভাড়ায় দেওয়ার কাজটি শেষ করতে সহায়তা করেন চসিকের রাজস্ব বিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ, চট্টগ্রাম অফিসের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে কে সি দে রোডে বিদ্যমান চসিকের পাবলিক টয়লেটের পশ্চিম পাশে ৩৭৬ বর্গফুট আয়তনের ফুটপাতের জায়গাটি টিন দিয়ে ঘেরা। সেখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুটের জায়গা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে টিনের প্রাচীরও দেওয়া হয়েছে। টিনের সঙ্গে ঝুলছে একটি ডিজিটাল ব্যানার। ব্যানারে লেখা আছে, ‘নির্মাণ কাজ চলিতেছে, সাবধানে যাতায়াত করুন, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।’

জানা যায়, প্রচারবিহীন ও নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেলামি এবং মাসিক ৩ হাজার ৭৫০ টাকা ভাড়ায় ৩৭৬ বর্গফুট আয়তনের কে সি দে রোড এলাকায় ফুটপাতের জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই জায়গাটির দরপত্র দাখিলের তারিখ ছিল চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। পরে গত ২৮ জানুয়ারি জানে আলম নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে আগামি এক বছরের জন্যে চুক্তি করেছে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ। আগামি এক বছর পরপর উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে ওই চুক্তির নবায়ন করা হবে।

কম টাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাতের জায়গা ভাড়া নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার জানে আলম বলেন, ‘সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের আন্তরিক সহযোগিতায় সিটি কর্পোরেশনের জায়গাটি ভাড়ায় নিয়েছি। সিটি কর্পোরেশন দিয়েছে তাই ভাড়ায় নিয়েছি। এখানে তো কারোরই প্রশ্ন থাকার কথা নয়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশাসক সুজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমি সুজন ভাই ও মশিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক আজকের নয়।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমি এখন সেখানে দায়িত্বেও নেই। আমার বিরুদ্ধে যা পারেন লিখেন। আমি এসবের কোনো প্রতিবাদ করবো না।’

জানতে চাইলে চসিকের ভূমি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে বক্তব্যে দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও সেখান থেকে সাড়া মেলেনি।

মুআ/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!