মাঠকর্মীদের কাছ থেকে কমিশন নেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, আছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগও

অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, যৌন নিপীড়ন ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ট্রেনিংয়ের সম্মানি থেকে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলেও জানা গেছে। তাকে অপসারণের দাবিতে স্বাস্থ্য মহাপরিচালককে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন।

মাঠকর্মীদের কাছ থেকে কমিশন নেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, আছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগও 1

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি দেয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার দালাল সুজন বড়ুয়া। তিনি জালিয়াত, যৌননিপীড়ন, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করে ক্ষমতা অপব্যবহার করে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে দুর্নীতির আঁতুরঘরে পরিণত করেন তিনি।

বক্তারা বলেন, সুজন বড়ুয়া বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে সিভিল সার্জন অফিসের ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কর্মচারীদের হয়রানি করে আসছেন। কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ঘুষ আদায়সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করছেন তিনি। এমনকি তার ভয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।

বক্তারা আরও বলেন, সুজন বড়ুয়া রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে ২০১২ সালে জাল নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকরি নেন। এ বিষয়ে অভিযোগ উঠলে, জেলা পরিষদকে না জানিয়ে গোপনে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় চলে যান। এছাড়া ২০১৫ সালে জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হিসেবে ১০ম গ্রেডে বান্দরবান জেলা পরিষদ থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে অবৈধ পদোন্নতি নেয়। ২০১৬ সালে জনৈক উপজাতি নারী সহকর্মীর যৌননিপীড়নের অভিযোগে বান্দরবানে সাময়িক বরখাস্ত হন। ওই তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় তিনি তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. উদয় শংকর চাকমাকে ম্যানেজ করে জেলা পরিষদকে না জানিয়ে গোপনে বদলি হয়ে চলে যান ফেনীতে। এরপর ২০১৮ সালে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আরেকটি পদোন্নতি নিয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগদান করে এখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে।

মানবন্ধনে তারা আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর তার এসব অপকর্ম আমরা ছাত্র সমন্বয়কসহ সিভিল সার্জন বরাবরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অবহিত করলে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেন। আমরা তার সম্মানে এ যাবৎ ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু দুর্নীতিবাজ সুজন বড়ুয়া নতুন আঙ্গিকে আমাদের থেকে চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

মানববন্ধনে সুজন বড়ুয়াকে চট্টগ্রাম জেলা থেকে আগামী সাতদিনের মধ্যে অন্যত্র বদলি, তার জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত বোর্ড গঠন এবং সরকারি চাকুরি থেকে অপসারণসহ সাত দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সভাপতি মো. ফজলুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এসএম কুদরাত ই খুদা রকি ও মঈনুল আহসান আলী সাগরসহ অনেকে বক্তব্য দেন। এতে জেলার ১৫টি উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারীসহ মাঠ পর্যায়ে দুই শতাধিক কর্মচারী অংশ নেন।

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm