মাঝ নদী থেকে ধরে এনে ১২ জেলেকে পেটালো আওয়ামী লীগ নেতার বাহিনী

নদীতে ‘খসকি জাল’ কাটার অভিযোগে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অন্তত ১২ জন জেলেকে তুলে এনে মারধর করা হয়েছে অমানবিকভাবে। এদের মধ্যে আটজন আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। জলদস্যুদের ধরনে এই হামলার ঘটনায় ৮ জেলে আহত হলেও থানায় হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় ভয়ে অভিযোগ করেনি কেউই।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের ছোয়াখালী ঘাটের দক্ষিণে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমীরের অনুসারীরা এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ছোয়াখালী ঘাটের অদূরে অবৈধ খসকি রয়েছে সমীরের। সোমবার জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় তাদের বোটের সাথে লেগে তার খসকির জাল কেটে যায়। এই কারণে মঙ্গলবার দুপুরে সমীরের ৩০-৩৫ জন অনুসারী সশস্ত্র অবস্থায় লালবোট নিয়ে নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে যাওয়া ৫টি বোটসহ অন্তত ১২ জন জেলেকে ধরে আনে। ধরে আনা ৫টি বোট সারিকাইতের বাংলাবাজার ঘাটের বলে জানা গেছে। এ সময় নদীতে ১৫ রাউন্ডের মত গুলির শব্দ শোনা গেছে বলেও জানিয়েছে সূত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরে জেলেদের ছোয়াখালী ঘাটে এনে বেধড়ক পেটানো হয়। হামলার এই ঘটনায় ৮ জন জেলে আহত হন। যাদের দুজনের অবস্থা বেশ গুরুতর। পরে খবর পেয়ে বাংলাবাজার ঘাটের ইজারাদাররা এসে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আহতদের সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।

হামলায় আহত ৮ জেলে হলেন বোরহান সেরাং, এরশাদ, থানডু, দুর্লভ প্রকাশ দুরফা, রুহু দাশ, শিপন জলদাশ, শ্যামল মাঝি, আকবর। এদের মধ্যে বোরহান ও এরশাদ বেশ গুরুতর আহত বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামলার শিকার এক জেলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিনা কারণে আমাদের জলদস্যু স্টাইলে ধরে এনে পিটিয়ে আহত করেছে সমীর মেম্বারের লোকজন। আমাদের ঘাটের মালিকরা এসে তাদের সাথে আপোষ করে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ফেললো। আমাদের বলা হয়েছে আমরা যেন এই বিষয়ে কারো সাথে কথা না বলি। যারা আহত হয়েছে তারা সুস্থ হলে সালিশ করে এটির সমাধান করা হবে।’

মীমাংসার বৈঠকে কে কে ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই জেলে বলেন, ‘সমীর মেম্বারের ভাই জাহাঙ্গীর আর আমাদের ঘাট মালিকদের মধ্যে আকতার হোসেন শিবলু, মিলন মেম্বার ও মেহেরাব হোসেন বৈঠকে ছিলেন।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে আকতার হোসেন শিবলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা তো মিটে গেছে। আমরা জেলেদের নিয়ে আসছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সমীর মেম্বার খুব আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভারও তিনি বহন করবেন বলেছেন। সবাই সুস্থ হলে আমরা এটা বসে মীমাংসা করবো।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি দাবি করে মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলেদের ওপর হামলা কিংবা কোনো বৈঠকের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। খবর নিয়ে দেখি আসলে এমন কিছু ঘটেছে কিনা।’

অন্যদিকে ঘটনার ১০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে কিছু জানে না সন্দ্বীপ থানা। সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এমন ঘটনা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। আমি খবর নিয়ে দেখছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!