মহসিন কলেজে নারীসহ দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়া হল

আলাদা করা হয়েছে ২৫ শিক্ষার্থীর এডমিট কার্ড

পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে একদল শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে ক্যাম্পাসে। পরে পুলিশ ডেকে দুজনকেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড মারধরে গুরুতর আহত হলেও চকবাজার থানার পুলিশ তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে প্রায় পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় থানায় বসিয়ে রাখে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কের আড়ালে ছাত্রশিবিরের কর্মীরাই তাদের ওপর একযোগে হামলা চালায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম দিয়ে মূলত তারাই দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ভেতরে শিক্ষার্থী পেটাচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, পুলিশে দেওয়া দুই শিক্ষার্থীই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ এ ঘটনা ঘটেছে।

ক্যাম্পাসে নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থীরা হলেন তানজিল হাসান রবিন ও ইসরাত জাহান। দুজনেই সরকারি মহসিন কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে তানজিল হাসান মহসিন কলেজ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ইসরাত জাহানও ছাত্রলীগের যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সকালে মারধরের পর দুপুর ১২টার দিকে চকবাজার থানার পুলিশকে ডেকে নারীসহ দুই শিক্ষার্থীকেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রচণ্ড মারধরে গুরুতর আহত হলেও চকবাজার থানার পুলিশ তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে প্রায় পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় থানায় বসিয়ে রাখে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

মহসিন কলেজের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে কলেজে ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। এর এডমিট কার্ড বিতরণ হচ্ছে ১৯ নভেম্বর থেকে। কিন্তু ওইদিনই ২৫ জন শিক্ষার্থীর এডমিট কার্ড নিয়ে যান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কলেজ সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত এজিএম বাপ্পী ও ছাত্রশিবির নেতা আনোয়ার। তখন তারা বলে দেয়, ওই ২৫ জন শিক্ষার্থীর এডমিট কার্ড কলেজের বোটানি ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক রেজাউল করিমের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ২৫ জন শিক্ষার্থীই কোনো না কোনোভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে যারাই এডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে গিয়েছেন, তাদের বেদম মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মারধরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কলেজ সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহসিন কলেজ শাখার সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী বলেন, ছাত্রলীগ নেতা তানজিল হাসান রবিন ও ছাত্রলীগের নেত্রী ইসরাত জাহান তিন্নি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজে আসলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের আটক করে। পরে চকবাজার থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘মহসিন কলেজে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরের দিকে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুজনের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তারপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ক্যাম্পাসে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি দাবি করেছেন মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এগুলো কলেজের বাইরের ঘটনা হয়তো। আমাদের সাড়ে ১২টা পর্য়ন্ত একনাগাড়ে ক্লাস চলেছে। এরপর ১টা থেকে অনার্স প্রথম বর্ষের ক্লাস ছিল। বিকাল ৫টায় আমি কলেজ থেকে বেরিয়েছি। এমন কোনো তথ্য কেউ আমাকে জানায়নি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm