মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ চকবাজার ওয়ার্ড

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড একটি জনবহুল এলাকা। প্রায় দেড় লক্ষ লোকের বসবাস এই এলাকায়।

এখানে রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতাল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি রয়েছে গার্মেন্টসও।

সম্প্রতি দেখা গেছে, কাপাসগোলা আবছারের দোকান থেকে শুরু করে মুকবুল সওদাগর লেইন, মুন্সীপুকুর পাড়, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা বড় গ্যারেজসহ গোটা এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। গত তিন মাস যাবত কাজ চলছে। কিন্তু কাজটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলায় খোলা ড্রেনে জমে আছে পানি। এই দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে প্রতিনিয়ত জম্ম নিচ্ছে মশা। এসব জম্ম নেওয়া মশার উপদ্রবে চকবাজার ওয়ার্ডের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

এমন কি দিনেও এলাকাবাসী মশার কামড় থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মশার আক্রমণ শুরু হয় তীব্রভাবে। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের পড়ালেখা এতে মারাত্মকভালবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা ও ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর একটি এলাকায় পরিণত হয়েছে চকবাজার ওয়ার্ড। ইতোমধ্যে নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে।

এসব জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিরসনে স্থানীয় কাউন্সিলর কোন ভূমিকা রাখছেন না বলে সামাজিক গণমাধ্যম ফেইসবুকেও অনেকে লিখালেখি করেছেন।

বর্তমানে যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে তা বিগত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। মশা নিধনের জন্য প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশনের বিরাট অংকের বরাদ্দ থাকে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে মশা নিধনের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে অনেক। এরপরও যদি মানুষ মশার অত্যাচার থেকে এলাকার মানুষ রক্ষা না পায়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মশাবাহিত রোগ চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই এলাকার অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন ভুগেছে। বর্তমানে সারাদেশে আছে ডেঙ্গুজ্বরের আশংকা রয়েছে। এই আশংকার মধ্যেও চকবাজার এলাকায় মশানিধনে কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মশার যে ওষুধ ছিটায় সেগুলো মশানিধনে কতটুকু কার্যকর তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এই ওষুধগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও দরকার এলাকাভিত্তিক মনিটরিং সেল। কারণ মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেও বড় ধরনের অনিয়ম ঘটছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া যথাসময়ে মশার ওষুধ না ছিটালেও উপদ্রব ঠেকানো কঠিন। আর এই ওষুধ দিতে হয় মশার প্রজননস্থলে। বছরের উপযুক্ত সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ওষুধ ছিটাতে হয়। মশার ওষুধ একই দিনে দু’বার প্রয়োগ করার নিয়ম রয়েছে। একবার ভোরে বা সকালে দিতে হয় মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আবার বিকেল বা সন্ধ্যায় দিতে হয় প্রাপ্ত বয়স্ক মশা মারার জন্য। এক্ষেত্রে মশার ওষুধের গুণগত মান অবশ্যই ভাল হতে হবে।

মশার প্রজননের ক্ষেত্রগুলো অনেকাংশে ঘরের মধ্যেই থাকে। বিশেষ করে বাসাবাড়ির আঙিনায়, ফুলের টব, ছাদ বাগান, এসি ও ফ্রিজের জমানো পানি থেকে মশার বংশবিস্তার ঘটে বেশি। এসব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পরিস্কার দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদের সবাইকে মাসে একবার হলেও নিজেদের বাসাবাড়ি এবং ভবনের আশপাশ পরিস্কার করতে হবে। নিজেদের সচেতন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মশার কয়েলসহ সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। তাই মশার জন্মস্থান ধ্বংস করাই জরুরি।

গত ৩১ মার্চ জেলা প্রশাসকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় সভায় রাজধানী ঢাকায় মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মশার গান আমি শুনতে চাই না, আমি যখন ঘুমাতে গেলাম তখন দেখলাম মশারা সংগীত চর্চা করছে, মশার গান শুনলাম। মশা গুন গুন করে কানের কাছে গান গাচ্ছিল।’ তিনি এ ব্যাপারে এখন থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

চকবাজারসহ গোটা চট্টগ্রাম শহর এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। প্রায় সময় এলাকাবাসীকে দিনের বেলায়ও মশারির ভেতরে এক প্রকার বন্দি থাকতে হচ্ছে। এমনিতে নভেল করোনা ভাইরাসে আতংকিত মানুষ। আবার অন্যদিকে কে কখন কোথায় এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয় এম্ন উৎকন্ঠা সকলের মধ্যেই বিরাজ করছে।

তাই সবদিক বিবেচনা করে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

চকবাজার থেকে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!