মধ্যরাতে বায়েজিদের পাহাড়ে ধর্ষণচেষ্টা, ৫ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস লড়াই শিকার ও শিকারীর
তরুণীর এক লাথিতেই পাহাড় থেকে ছিটকে পড়ে যুবক
মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় এক তরুণীকে তুলে নিয়ে কাছের এক পাহাড়ের ঝোঁপে নাটকীয় কায়দায় ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এক যুবক। সেই তরুণীর এক লাথিতে যুবকটি ছিটকে পড়ার পর পাহাড়ের ভেতরেই চলে ভিকটিম আর ধর্ষণচেষ্টা চালানো যুবকের শ্বাসরুদ্ধকর লুকোচুরি খেলা। শেষপর্যন্ত ৫ ঘন্টাব্যাপি এক অভিযানে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তার হল সেই তরুণও।
বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর বালুছড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ধর্ষণচেষ্টার শিকার ওই তরুণী কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারখানা ছুটি হলে তিনি তার এক সহকর্মীর সঙ্গে কারখানার আশপাশের এলাকায় ভাড়া বাসার খোঁজে বের হয়েছিলেন।
তারা যখন বায়েজিদের ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলের সামনে পৌঁছান, তখন দুই যুবক তাদের পথ আটকায়। তাদের একজন ওই তরুণীর সহকর্মীকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে অপর যুবক তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পাহাড়ের ভেতর। সেখানে একটি ঝোঁপের আড়ালে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে থাকে।
তরুণীটি এ সময় ওই যুবককে সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মারলে যুবকটি পাহাড়ের ঢালুতে পড়ে যান। আর সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অন্য একটি ঝোঁপের আড়ালে আত্মগোপন করেন ওই তরুণী। অন্যদিকে ধর্ষণচেষ্টায় বিফল যুবক খুঁজতে থাকে তরুণীকে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আর খুঁজে পায়নি যুবক।
এর মধ্যে ওই তরুণীর সহকর্মী বায়েজিদ থানার একটি টহল টিমের সামনে পরলে তাদের সব খুলে বলে। তাৎক্ষণিকভাবে বায়েজিদ থানার পুলিশও পৌঁছে যায় পাহাড়ের ভেতরে। কিন্তু পাহাড়জুড়ে দুই ঘন্টা তল্লাশির পরও আত্মগোপন করে থাকা তরুণীকে খুঁজে পাচ্ছিল না তারাও। এসময় স্থানীয়রাও পুলিশের সাথে যোগ দেয়। একপর্যায়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পাহাড় ঘিরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। শেষপর্যন্ত পুলিশের বাঁশির শব্দ ও টর্চের আলো দেখে তরুণীটি একপর্যায়ে বের হয়ে আসেন ঝোঁপের আড়াল থেকে।
এদিকে ধর্ষণচেষ্টায় বিফল হয়ে যুবকটি চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্টের পাশে পাহাড়ের ঢালুতে শুয়েছিল। সেখানে তাকে খুঁজে পেতেও বায়েজিদ থানা পুলিশের সময় লেগেছে অন্তত তিন ঘন্টা। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ধরা পড়ার পর ধর্ষণচেষ্টায় বিফল এই যুবকের নাম জানা গেছে মুরাদ হোসেন (৩৩)। বায়েজিদের কুলগাঁও মাইজপাড়া এলাকার সাবের আহমদের পুত্র তিনি। তবে তার সহযোগী যুবক এখনও পলাতক। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বালুছড়া এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ওই তরুণীর বাসা নগরীর আকবর শাহ এলাকায়। আগে কারখানা ছুটি হলেও সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বালুছড়া এলাকায় নতুন বাসা খোঁজে নেমে রাত হয়ে এসেছিল।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি নিজেও এই অভিযানে সশরীরে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘মেয়েটির বাসা আকবর শাহ। এখন তো গার্মেন্টসে ডাবল শিফটে কাজ চালু হয়েছে। তার জন্য আকবর শাহ থেকে এসে ডাবল শিফটে কাজ করা কঠিন। তাই সে ওই এলাকায় বাসার খোঁজ করছিল। আর ঘটনার দিন অফিস শেষে তার কর্মস্থলের পাশেই বাসার খোঁজে গিয়েছিল সে। সে সময় এমন ঘটনা ঘটে।’
এই ঘটনায় মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভিকটিম মেয়েটি নিজে বাদি হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি কামরুজ্জামান।
সিপি