ভিডিও/ মধ্যরাতে বাসায় ঢুকে পুলিশের তাণ্ডব, ইয়াবায় ফাঁসানোর চেষ্টা!

আর দশটি পুলিশি অভিযানের মতোই হতে পারতো এই ঘটনাও— ‘গৃহবধূর বাসা থেকে ৭৮ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার, আসামি আটক, ইয়াবা মামলা দায়ের!’ কিন্তু না। ঘটনার গভীরে গিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এল অন্য কাহিনী।

মধ্যরাতে সাদা পোশাকে আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে তার বাসায় ঢুকে লুটপাট ও তাণ্ডব চালিয়েছে ইপিজেড থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য। চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার নেভী হাসপাতাল গেট এলাকায় এক গৃহবধূ এমন অভিযোগ করেছেন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ এক সোর্সের বিরুদ্ধে। গৃহবধূ তামান্না অভিযোগ করেন, এ সময় ৩৯ হাজার টাকা ও স্বর্ণসহ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত প্রায় তিনটার দিকে মাদ্রাজি শাহ রোডে তসলিমা ম্যানসনের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে।

গৃহবধূর নাম তামান্না (২২)। তিনি পিরোজপুর থানার মঠবাড়িয়া থানার হাওলাদার বাড়ির আমির হোসেনের মেয়ে। তিনি ওই এলাকার নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী। তার বাসায় তাণ্ডব চালানো তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন এএসআই কামরুল ইসলাম, এএসআই তানভীর এবং এএসআই ওসমান। অপরজন হলেন সোর্স জসিম উদ্দিন প্রকাশ ইয়াবা জসিম।

এদিকে পুলিশ বলছে, নিজাম উদ্দিন নামের আসামিকে ধরতেই ওই বাসায় হানা দেয় পুলিশ। এ সময় আসামি বাসায় ছিল না। পরে তল্লাশি চালিয়ে ৭৮ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা সেবন করার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে আসামি নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও একটি ইয়াবা মামলা করা হয়েছে।

গৃহবধূ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত তিনটার দিকে সিভিল পোশাকে ইপিজেড থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্স জসিম প্রকাশ ইয়াবা জসিম বাসার দরজা টোকা দিয়ে দরজা খুলতে বলে। আমি দরজা খুলতেই দেরি না করে চারজন ঢুকে পড়েন বাসায়। কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই ঘরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে আমি বললাম স্যার বাসায় কেন আসছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথমে গালিগালাজ এবং পরে ধমক দিয়ে আমাকে কোন কথা না বলতে বলেন। পরে আবারও প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তা আমার গায়ে হাত তোলেন।’

গৃহবধূ তামান্না বলেন, ‘পুলিশের ভয়ে আমার তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘরের এক কোণায় বসে পড়ি। এরপর তারা আমার আলমারি, খাট, ড্রয়ার ও রান্নাঘরে তল্লাশির নামে লুটপাট চালান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়ে ভোরের আজান দেওয়ার পর পরই তারা বেরিয়ে যায়। এ সময় কোন কিছু না পেয়ে আমার মেয়ের একটি খেলনা পিস্তল নিয়ে পার্শ্ববর্তী ঘরের একজনকে সাক্ষী বানিয়ে সেটি নিয়ে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর দেখি আমার বালিশ, আমার স্বামীর মানিব্যাগ ও ড্রয়ার থেকে প্রায় ৩৭ হাজার পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ২টি মোবাইল, তিন আনা ওজনের মেয়ের একটি কানের দুল, সাড়ে পাঁচ ভরির ওজনের রুপার একটি ব্রেসলেট, একটি নাকের স্বর্ণের নথসহ বেশ কিছু জিনিস পাওয়া যায়নি।’

বিষয়টি জানতে ইপিজেড থানার ওসি মীর মোহাম্মদ নুরুল হুদাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি ওখানে যাওয়ার আগে (গৃহবধূর বাসায়) আমাকে জানাবেন না? বিষয়টি নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না এখন।’

এদিকে ওসি সঙ্গে কথার কিছুক্ষণ পর ফোন করেন ইপিজেড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওসমান গনি। মুঠোফোন রিসিভ করার পরেই প্রায় গর্জনের সুরে তিনি বলেন, ‘আপনি কোন্ পত্রিকার সাংবাদিক? পত্রিকায় আপনার পদবি কী?’

এরপর প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘গৃহবধূর স্বামী একজন পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তার এক এসোসিয়েটকে পুলিশ আটক করেছে। ওই এসোসিয়েটের দেওয়া তথ্যমতে আসামি নিজামকে ধরতে গিয়েছিল পুলিশ।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই পরিদর্শক বলেন,‘ঘটনাস্থলে আপনিও ছিলেন না, আমিও ছিলাম না। তাহলে আপনি ওনার বক্তব্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না।’

উত্তেজিত কণ্ঠে ওই পরিদর্শক বলেন, ‘গৃহবধূর বাসা থেকে ৭৮ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল দশটায় নিজামের বিরুদ্ধে একটি ইয়াবা মামলাও দায়ের হয়েছে।’

মুআ/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!