‘মধু হই হই বিষ হাওয়ালা’খ্যাত শিশু জাহিদকে অনুসরন : পর্যটকদের বিরক্ত করছে গায়েন দল : এক দিনে ১৭জন হকার আটক
এস এম আরোজ ফারুক,কক্সবাজার॥
‘মধু হই হই বিষ হাওয়ালা’ খ্যাত শিশু জাহিদকে প্রায় সবারই চেনা। তার এই গানটি ফেসবুকে প্রচার হওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যেই জাহিদ রীতিমত তারকা বনে যায়। এর পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে তার জীবনধার। টিভি বিজ্ঞাপন, স্টেইজ শো, রেডিওসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। সব শেষ তার স্থান এখন তারকা মানের হোটেল সায়মন বীচে’র গায়ক।
জাহিদের দ্রুত সময়ের এই উত্থান এর কারণ মূলত সে কক্সবাজর সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের গান শোনাতো। তার গান শ্রোতাদের মন ছুঁয়েছে বলেই আজ তার জীবনের এই পরিবর্তন। কিন্তু সবার প্রতিভা এক রকম নয়, সবার কন্ঠে সুর থাকে না, সবাই ভাল গানও গাইতে পারেনা। তার পরও এখনো সৈকতে জাহিদের মতো এমন অনেক শিশুরা আছে যারা জাহিদের মতো হওয়ার চেষ্টায় মরিয়া।
শিশু জাহিদ তাদের কাছে এক আইডল হিসেবে পরিনত হয়েছে। আর তাই সৈকতে অনেক শিশুরা পর্যটকদের বিরক্ত করে চেষ্টা করছে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের। তবে তাদের অজান্তেই বিরক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কক্সবাজার থেকে ফিরছেন পর্যটকরা। তাছাড়া সৈকতে হকার, ভিক্ষুকতো আছেই। সব মিলিয়ে পর্যটকদের একান্ত সময় কাটানোটা দিন দিন বিষাদে পরিনত হচ্ছে।
সৈকতের বালিযাড়ী ও কিটকটে বসে একান্ত কিছু সময় কাটানোর সময় হকার ও গান শোনানোর দল এসে তাদের সময়টা নষ্ট করছে। এতে করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে কক্সবাজারেরই। সবাই তো আর শিশু শিল্পী জাহিদ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না এটা অনেকের বোঝার বাকি। যার ফলে জাহিদকে অনুসর করতে গিয়ে পর্যটককে বিরক্ত করছে সৈকতের গায়েন দল।
পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমন আরো স্বাচ্ছন্দময়ী করে তুলতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকাকে ভিক্ষুক, হকার, গায়েন দলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
একই সঙ্গে বীচ সীমানায় টোকাই ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে লাবণী পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ভ্রাম্যমান হকার, মাসাজম্যান, গায়েনসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়। আটকরা সবাই শিশু হওয়ায় মানবিক কারণে মুসলেকা নিয়ে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের ব্যাপারে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনাও রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের।
এ প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোন এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোঃ রায়হান কাজেমী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি বিশ্ব দরবারে কক্সবাজারকে আরো বেশী তুলে ধরতে। চেষ্টা করছি সমুদ্র সৈকতে পর্যটক আগমণ বাড়াতে। এ চিন্তা থেকে সমুদ্র সৈকত এলাকাকে ভিক্ষুক ও হকারমুক্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া টোকাই ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দমণেও কঠিন নীতি অবলম্বন করা হবে বলেও জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সৈকত এলাকা থেকে ইতিমধ্যে অনেক হকার আটক করা হয়েছে। আটক হকারদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এএসপি রায়হান কাজেমী আরো জানান, ‘শহরের সমিতিপাড়া, বাদশাঘোনা, ঘোনারপাড়া, লাইট হাউজ, কলাতলী আদর্শ গ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ ও স্কুল ভিত্তিক শিক্ষার্থী সমাবেশ আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন সৈকতে গান গেয়ে উঠে আসা শিশু জাহিদকে অনুসরন করতে গিয়ে অনেকে পর্যটকদের গান গেয়ে শোনাতে চায়, এতে অনেকে বিরোক্ত হচ্ছে। কিন্তু সবাই তো আর জাহিদ হতে পারবে না এটাও আমাদের বুঝা উচিৎ সাথে অভিভাবদেরও। যাদের বিনোদন প্রয়োজন তারা নিজেরা গান করবে তাতে কোন বাধা নেই।’
এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::