ভিডিও/ মইজ্যারটেক-বিএফডিসি সড়কের এই অবস্থা!

ঠিকাদারের হেলাফেলা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের মইজ্যারটেক থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট এবং ইছানগর থেকে বিএফডিসি সড়ক বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দক ও বৃষ্টির পানিতে সড়কে বড় বড় ডোবার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। নিম্নমানের কাজের কারণে সড়কটি বারবার সংস্কার করেও এর সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। যেনতেনভাবে পাথরের বদলে ইটের খোয়া, মাটির বদলে নদীর বালি দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো— এমন অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।

বিএফডিসি থেকে মইজ্যারটেক সড়ক দিয়ে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী ছাড়াও অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া শতাধিক শিল্পকারখানার অসংখ্য মালবাহী ট্রাক এ সড়কটি ব্যবহার করে।

YouTube video

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মইজ্যারটেক থেকে ব্রিজঘাট পর্যন্ত ৩০০ মিটার সড়ক এবং ইছানগর বাজার থেকে বিএফডিসি ৫০০ মিটার সড়কে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ নদী পারাপার হয়ে শহরে যাতায়াত করে মইজ্যারটেক থেকে ব্রিজঘাট ও ইছানগর থেকে বিএফডিসি সড়ক দিয়ে। ইছানগর বিএফডিসি সড়কটি কয়েক মাস আগেরও সংস্কার করা হয়। মাসের ব্যবধানে সড়কের অবস্থা বেহাল, চরম দুর্ভোগের শিকার সাধারণ জনগণ। স্থানীয়দের দাবি, নিম্নমানের সংস্কার কাজের কারণে বারবার সংস্কার করেও সড়কের বেহাল দশা কমানো যাচ্ছে না। নিম্নমানের কাজের জন্য খুব দ্রুত সড়ক দুটিতে খানাখন্দক ও গর্তের সৃষ্টি হয় – এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্পে কাজ করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স, হাসান টেকনো বিল্ডার্স ও সালেহ আহমেদ জেবি। সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। কাজের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এর আগেও ধীরগতির কাজ ও অনিয়মের অভিযোগ আছে।

অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজে নিম্নমানের ইট ও বালি ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। জানা গেছে, প্রকৌশলী ছাড়া রাতের আঁধার বা ভোরে হেলপার, মিস্ত্রি ও দিনমজুর দিয়ে দায়সারাভাবে শেষ করা হচ্ছে কোটি টাকার সড়ক সংস্কারের কাজ।

স্থানীয় সিএনজিচালক মো. হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে তার তুলনায় সড়কটি ততটা মজবুত নয়। সড়কটির সংস্কারকাজ খুবই নিম্নমানের। এ কারণে বারবার সংস্কার করেও কোন লাভ হচ্ছে না আমাদের। প্রতিনিয়ত খানাখন্দে ভরা সড়কের জন্য গাড়ি আটকে যাচ্ছে। এ কারণে সন্ধ্যা হলে লম্বা জ্যামের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন।

নিম্নমানের কাজের জন্য খুব দ্রুত সড়ক দুটিতে খানাখন্দক ও গর্তের সৃষ্টি হয়
নিম্নমানের কাজের জন্য খুব দ্রুত সড়ক দুটিতে খানাখন্দক ও গর্তের সৃষ্টি হয়

বিএফডিসি রোডের দোকানদার মানিক মিয়া বলেন, ‘রাস্তার সংস্কার কাজে নদীনালার বালি ও মানসম্মত পাথরও ব্যবহার করছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই সড়কের জন্য ব্যবসা করতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের।’

অটোরিকশা চালক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন কত কষ্ট করে আমাদের এই কাদাপানি-গর্ত দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। এই গত পরশু কাদামাখা গর্তের কারণে ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে যায় অটোরিকশাটি। চালকের কিছু না হলেও অটোরিকশাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে আমরা ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাই এই রোডে৤ কখন কী হয় আল্লাহই জানে।’

স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানান, পায়ে হেঁটে এই কাদামাখা সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসা খুবই দুষ্কর। জুতো পড়ে হেঁটে গেলে জুতো ছিঁড়ে যায়৤ কাদাপানিতে খালি পায়ে হেঁটে গেলে আর স্কুলে যাওয়ার অবস্থা থাকে না। বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে মালবাহী ট্রাকের পাশ দিয়েই জীবনের ঝুকি নিয়ে অটোরিকশায় যেতে হয় স্কুলে।

তারা অভিযোগ করেন, কাজের মান ভালো হয় না বলেই বার বার সংস্কার করলেও কোন কাজের আসে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের পটিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এলাকাবাসী না বুঝে সমালোচনা ও লিখিত অভিযোগ করেছে। নিয়মমাফিক রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। কোথাও কোন নিম্নমানের কাজ হচ্ছে না। ভালোমানের পাথর ও বালি দিয়েই কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, পাথরের পরিবর্তে ইটের খোয়া, মাটির পরিবর্তে নদীর বালি দিয়ে সংস্কারের কাজ চলছে—স্থানীয়দের এই অভিযোগ ঠিক নয়।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনিয়মের এই প্রকল্পে কাজ নিয়ে জনগণের কাজ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদি কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজের সাথে জড়িত থাকে তাহলে বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm