ভয়ে করোনারোগী নেয় না আনোয়ারার সরকারি হাসপাতাল, করোনা ইউনিটই স্বয়ং ‘পজেটিভ’

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ইউনিট ২০ বেডের আইসোলেশন এখন নিজেই পজেটিভ! আইসোলেশনে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের নয়টি সিলিন্ডার ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের জানালাও। রোগী ভর্তি না করায় ফেরত গেছে সরকারি বরাদ্দের ছয় লাখ টাকাও।

স্থানীয় সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক আইসোলেশন সেন্টার চালু করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের জন্য অক্সিজেন সংযোগের ব্যবস্থা না করায় সেবা না পেয়ে ফিরে যান রোগীরা। যার ফলে উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন লোকের শরীরে পজেটিভ শনাক্ত হলেও আক্রান্তরা নিজের বাড়িতে কিংবা শহরের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটে যান বলে জানা গেছে। এছাড়া করোনা মহামারীর শুরু থেকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে কোটি টাকার সুরক্ষা সামগ্রী আসার পরেও এগুলো নষ্ট হয়ে করোনা ইউনিট এখন নিজেই আইসোলেশনে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, অন্যান্য রোগীদের নিরাপত্তার কারণে এখানে করোনা রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না।

আনোয়ারা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে উপজেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে করোনা মোকাবেলার সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রী ব্যক্তিগত অনুদান থেকে আক্রান্তদের জন্য ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০ লিটারের চারটি সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ ২০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করে দেন। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল ইসলাম ৭০ লিটারের ৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ইউসিবি ব্যাংকের ইসি চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি ১৩ লিটারের ৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ থেকে ৭০ লিটারের ৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়।

এছাড়া কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) করোনা প্রতিরোধক বুথ স্থাপন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফেইস শিল্ড, সোয়ার স্টিক, বেড টিউব, নমুনা সংগ্রহ বুথসহ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চিকিৎসাসামগ্রী প্রদান করে। কিন্তু এসব সামগ্রী অযত্ন-অবহেলা ও ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে হাসপাতালের স্টোর রুমে পড়ে আছে। হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা বলতে শুধু নমুনা সংগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নেই। বর্তমানে ৭০ লিটারের ৩টি এবং ১৩ লিটারের ৩০টি অক্সিজেন সিলিল্ডার সচল থাকলেও ৭০ লিটারের ৯টি অক্সিজেন সিলিন্ডারই নষ্ট।

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নুরুল অবছার তালুকদার জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা আহ্বানের অনুরোধ করলেও গত এক বছর ধরে কোনো সভা তিনি করেননি। তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) তার করোনায় আক্রান্ত পিতাকে আনোয়ারা হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করাতে গেলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ না থাকায় সেখানে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। পরে চট্টগ্রাম নগরীতে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হয় তাকে।

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে ও দায়িত্বরর্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০ শয্যার করোনা আইসোলেশনের জানালা ভেঙে পড়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ২০টি পয়েন্ট থাকলেও অক্সিজেনের নেই কোনো সংযোগ। ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগীরা আইসোলেশনের বেডে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

আইসোলেশনে থাকা রোগীরা জানান, তারা করোনা রোগী নন। হাসপাতালের জেনারেটরটিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এক্স-রে মেশিন ব্যবহার কখন হয়েছে, কারও জানা নেই। সরকারি দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সাধারণ মানুষ এগুলোর দেখা পায় না। গত সপ্তাহে লকডাউন চলাকালে রোগী না নিয়ে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনকালে (১ জুলাই) কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে আটক হয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালককে গুণতে হয় জরিমানা।

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেজবাহ ছালেহীন জানান, ২০ শয্যার আইসোলেশন চালু হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো নিম্নমানের হওয়ায় অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, এ মুহূর্তে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও জ্বরসহ অন্যান্য রোগী বেশি হওয়ার কারণে করোনা রোগী ভর্তি করা হলে তারাও সংক্রমিত হতে পারে। তাই আনোয়ারা হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!