‘জীবনের চেয়ে নির্বাচনকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। সরকার যেখানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে সেখানে নির্বাচনেও মানুষ যাবে না। ফলে নির্বাচন হবে মূল্যহীন। মূল কথা হচ্ছে, আরও কয়েকদিন পরিস্থিতি দেখে সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) সিদ্ধান্ত নিতে পারে নির্বাচন পেছানোর। আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি যদি আরো খারাপের দিকে যায় তখন নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। যদি পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে নির্বাচন বন্ধের দরকার পড়বে না। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও পরামর্শকরা সঠিক পরামর্শ দিতে দিতে পারেন’— মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
আগামী ২৯ তারিখ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে চিকিৎসক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বড় দেশ গুলো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কিছুই না। আমাদের উচিত ভয়াবহতা সৃষ্টি হওয়ার আগেই করণীয় কী সেটি ঠিক করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা সেটি একটি বড় উদ্যোগ। নির্বাচন বন্ধ না করলে মহামারির আকার ধারণ করবে নিমিষেই। সুতরাং যা করার এখনই করতে হবে।’
ইলিয়াস হোসেন নামের এক চাকরিজীবী এবারের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একে তো ভোটের ওপর তিনি বিরক্ত অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে। এর ওপর এবার করোনাভাইরাসের সর্তকতা। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রত্যেক নাগরিককে যেখানে নিজ ঘরে সুরক্ষিত থাকতে বলা হচ্ছে সেখানে ভোট দেওয়ার জন্য ডাকা বা আহবান করা সেটি আমার কাছে হাস্যকর।’
শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, ‘ভয়ে ভয়ে আছি কখন কোন্ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্কুল বন্ধ ঘোষণা করায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। এখন আসছে ভোট। ভোটে যেন দায়িত্বে না পড়ে সেটিই কামনা করছি।’
ষোলশহর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের চেয়ে জীবন বড়। ভোটের কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তার দায়ভার অবশ্যই সিইসিকে নিতে হবে। কারণ সিইসি স্বাধীন। তিনিই এর জন্য দায়ী থাকবেন।’
এদিকে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং ৫টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ২-১ দিন পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। করোনার কারণে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছে, এ অবস্থায় দেশের নির্বাচন বন্ধ হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে কেএম নূরুল হুদা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেইনি। আরও ২-১টা দিন দেখি। কারণ নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতি শেষের দিকে। প্রার্থীরা বলেছে, তারা সাবধানে প্রচারণা করবে, কিন্তু নির্বাচন যেন বন্ধ না হয়ে যায়।
২১ মার্চের নির্বাচন করা এখনও ইসির চিন্তায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন অবশ্যই আমরা বিবেচনা করবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা চাচ্ছি নির্বাচনটা হয়ে যাক।’
প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআরের) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে আরও দুজন নতুন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন ইতালি ফেরত। আরেকজন সংক্রমিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর মাধ্যমে, যিনি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে দেশে এই ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০ জনে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আইসোলেশনে রয়েছেন মোট ১৬ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে আছেন ৪৩ জন। দেশে সর্বমোট কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে ১০ জনের মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুজনের মধ্যে একজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনের ছিলেন, এমন একজনের মধ্যে আমরা পেয়েছি। আরেকজন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তিনি একজন বিদেশ থেকে এসেছিলেন এমন মানুষের সংস্পর্শে ছিলেন। তার মধ্যে আমরা সংক্রমণ পেয়েছি।’
এএস/সিপি