চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ভুয়া এনজিও পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (পিএসডিও) ৪ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গ্রাহকের অন্তত ৪৭ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে আরও ১২ কর্মকর্তা।
সোমবার (১ মার্চ) রাত ১০টায় ভুক্তভোগী দুই গ্রাহক ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭জনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের মধ্যে কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামের মো. মনির হাছান বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় এবং মঙ্গলবার (২ মার্চ) কাথরিয়া ইউনিয়নের কাথরিয়া গ্রামের শহীদুল্লাহ বাদি হয়ে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুইটি মামলা করেন ।
গ্রেপ্তার ৪ জন হলেন- ফেনীর সোনাগাজী এলাকার মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের পুত্র ফানা উল্লাহ বাহার, সাইফুর রহমানের স্ত্রী নাসিমা খান, আবুল কালামের পুত্র মো. বাহার উদ্দিন আবেদ, মিজানুর রহমানের পুত্র ফখরুদ্দিন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীর কালীপুরের পূর্ব কোকদন্ডী গ্রামের আঞ্জুমারার ভাড়া বাড়িতে সাইবোর্ডবিহীন অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে মানিকগঞ্জ, ঘিওর, বানিয়াজুরী বাজার এলাকার পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে এনজিও কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর দ্রুত তাদের কার্যক্রম বাঁশখালীর কালীপুর, বাহারছড়া, সাধনপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া ইউনিয়ন, পৌরসভার জলদীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করেন। বলা হয় ৫ হাজার টাকা জমা করলে ৫০ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা জমা করলে ১ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এ প্রতিশ্রুতিতে ২ শতাধিক লোকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিভিন্ন অংকে টাকা জমা নেওয়া হয়। তবে কাউকে ঋণ দেওয়া হয়নি। এমনকী কিছু গ্রাহককে ঋনের বই দিলেও অধিকাংশ লোককে হাতের লেখা কাগজ ধরিয়ে দেয়। তাতে সন্দেহের সৃষ্টি হলে গ্রামবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ ন ম শাহাদত আলম বিষয়টি তদন্ত করেন । তিনি বিভিন্নস্থান থেকে এ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের কার্যালয়ে হাজির করান। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিভিন্নস্থানে খবর নিয়ে পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে তালিকাভুক্ত কোন সংগঠনের খদিস না পেয়ে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫০ টাকা উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ভিড় জমান। পরে উদ্ধারকৃত টাকা কিছু সদস্যের ঋণ বই দেখে ফেরত দেওয়া হয়।
অপরদিকে, এনজিওর ৪ কর্মকর্তাকে আটকের বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে ভুয়া এনজিও কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। শতাধিক গ্রাহকের নেওয়া ওই টাকা কমপক্ষে ৪৭ লাখ টাকা হবে বলে গ্রাহকের দাবি। বাঁশখালীর চেচুরিয়া গ্রামেও পল্লী মঙ্গল সমিতি নামে আরও একটি ভুয়া এনজিও কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাঁশখালী থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ভুয়া এনজিও’র প্রতারক ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় ও আদালতে দুই ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করেছেন।
বাঁশখালীর কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শাহাদাত আলম ও কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাঁশখালীতে কর্মরত প্রত্যেক এনজিও তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হলে ভুয়া এনজিও’র প্রতারকরা এভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঠকাতে পারতো না।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে কোন এনজিও বাঁশখালীতে কর্মরত নেই। এটা একটি ভুয়া এনজিও।
এসএ