ভুল অপারেশন করেও চট্টগ্রামের লায়ন্স হাসপাতাল টাকার জন্য রোগী ছাড়ছে না
এক হালিমার অপারেশন হল আরেক হালিমার চোখে
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মিস্ত্রিপাড়ার তরুণী হালিমা আক্তার (১৯) খুলশীতে অবস্থিত চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে গিয়েছিলেন নেত্রনালীর অপারেশন করাতে। কিন্তু লায়ন্সের ডাক্তাররা সেই হালিমার চোখে অপারেশন করে বসিয়ে দিয়েছেন লেন্স। সেই ভুল ধরা পড়ল অপারেশনের পর। ভুল অপারেশনে রোগীকে চোখে লেন্স বসিয়ে দেওয়ার পর অনুশোচনা কিংবা ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, উল্টো সেই ভুল অপারেশনের টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দাবির সেই টাকা না দেওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না হালিমা আক্তারকে।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন হালিমা আক্তারের বড় ভাই আকাশ। পেশায় গাড়িচালক আকাশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম হালিমা আক্তারের সাথেও কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে হালিমা আক্তার বলেন, ‘আমার নেত্রনালীতে সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেছে নেত্রনালীতে অপারেশন করতে হবে। খরচ ৬ হাজার টাকা। এর আগে দুটো অপারেশনের তারিখ থাকলেও অপারেশন হয়নি। আজ শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আমি আমার মাকে নিয়ে অপারেশন করাতে যাই। আমাদের বলা হয় অপেক্ষা করতে। পরে ডাকলে যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর একজন এসে হালিমা আক্তার নাম ধরে ডাকে। আমিও যাই। উনারা আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।’
অপারশন শেষে ‘ঝামেলা’ ধরা পড়ার বর্ণনা দিয়ে হালিমা আক্তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অপারেশন শেষে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার স্বামীর নাম কী? আমি তখন উনাকে বললাম আমি তো অবিবাহিত। এরপর উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার বাবার নাম কী? আমি আমার বাবার নাম বলতেই তিনি উনার সাথে থাকা নার্সকে বলেন একটা ঝামেলা তো হয়ে গেছে। আরেক হালিমার অপারেশন একে করা হইছে।’
এর পরের পরিস্থিতি বর্ণনা দিয়ে হালিমা আক্তার বলেন, ‘এটা বলেই ডাক্তার চলে যান। আমরা অনেকক্ষণ একা ছিলাম। পরে কেউ আসছে না দেখে আমার মা নার্সের কাছে গেলে তারা এসে আমাকে আবার ওটিতে শুইয়ে দেয় ১০টার দিকে। বলে ডাক্তার আসবে। এসে ওষুধ দেবে। ডাক্তার আসেন দুপুর ১টার দিকে। নার্স আমাদের বলেন— যে অপারেশন আমার হয়েছে, সেটার খরচ ১৫ হাজার টাকা। আমরা যেন ১২ হাজার টাকা জমা দেই।’
ভুল করে করা অপারেশনের টাকা কেন দেবে সেই প্রশ্ন করতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে জানিয়ে হালিমা আক্তার বলেন, ‘আমি উনাদের বললাম আমার তো নেত্রনালীর অপারেশন করার কথা। আপনারা চোখে লেন্স কেন লাগাইছেন চোখে তো কোনো সমস্যা নাই। তখন একজন আমাকে বলছে আগে ছোট মেশিনে দেখে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। পরে সমস্যা আছে মনে হওয়ায় তারা আমার ভালোর জন্য অপারেশন করেছে। এরপর বারবার আমাদের তাড়া দিয়েছেন। সবাই চলে যাচ্ছে আমরা যেন বিল দিয়ে ডিসচার্জ নিই। কিন্তু এই বিল আমরা কেন দেবো— যেখানে আমার সমস্যার সমাধানই হয়নি?’
এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে লায়ন্স ক্লবের কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন এসএম আশরাফুল আলম আরজুর মোবাইলে কয়েক দফায় কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে হালিমা আক্তারের অভিযোগ তুলে ধরে এ সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি সিন করে কোনো উত্তর দেননি।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) খুলশী থানায় অভিযোগ করার কথা জানিয়েছেন হালিমা আক্তারের বড় ভাই আকাশ। খুলশী থানার ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য এসআই নুর ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে এসআই নুর ইসলামকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানলেও তাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
এরপর খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমাকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। খানিক বাদে আবার নিজ থেকে কল করে সন্তোষ কুমার চাকমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনারা মৌখিক অভিযোগ করেছেন। কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তবু আমরা বিষয়টি দেখছি।’
সিপি