চট্টগ্রামের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সিডিএ এভিনিউ নাসিরাবাদ শাখার দুই কর্মকর্তা ২০০৭ সালে ‘মেসার্স এইচ অ্যান্ড এইচ কর্পোরেশন’র নাম দিয়ে একটি ব্যাংক হিসাব খুলেন। এরপর ভুয়া অংশীদারি চুক্তি, জাল কাগজ বানিয়ে ছয় বছরে ১০টি হিসাবের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় তাদের সহযোগী আরও দু’জনকেও আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপসহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাজালিয়া গ্রামের আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ নাসিরাবাদ শাখার সাবেক এভিপি ও ব্যবস্থাপক মো. তাজুল ইসলাম চেীধুরী (৫৭), চট্টগ্রামের রাঙ্গনিয়ার কদমতলী গ্রামের বীরেন্দ্র লাল দে’র ছেলে কাঞ্চন কুমার দে (৫৭) ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ নাসিরাবাদ শাখার সাবেক এসইও, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার চরখাগারিয়ার গ্রামের ইব্রাহীম চেীধুরীর ছেলে সাইফুল ইসলাম চৌধুরী (৫১) ও চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার বাংলাবাজার স্ট্র্যান্ড রোডের দোভাষ ভবনের মৃত আমির হোসেন দোভাষের ছেলে ইকবাল হোসেন দোভাষ (৬৯)।
দুদকের মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিডিএ এভিনিউ নাসিরাবাদ শাখার দায়িত্বে থাকাকালীন তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কাঞ্চন কুমার দে ‘মেসার্স এইচ অ্যান্ড এইচ কর্পোরেশন’ নামে ব্যাংকের শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলেন। ওই হিসাবের নমিনী করেন অপর দুই আসামি মো. সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ও ইকবাল হোসেন দোভাষের ছেলে মো. জাহিদ দোভাষকে। একইসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওই হিসাবের ইন্ট্রোডিউচার ছিলেন।
এছাড়া মো. আবদুস সবুর চৌধুরী ও আসামি ইকবাল হোসেন দোভাষকে একাউন্ট ওপেনিং ফরমে মেসার্স এইচ অ্যান্ড এইচ কর্পোরেশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বানানো হয়। ব্যবহার করা হয় ভুয়া ঠিকানাও।
মামলার বিবরণে আরও জানা গেছে, ২০০৮ সালে ৩ জুন মেসার্স এইচ অ্যান্ড এইচ কর্পোরেশন নামে একটি পার্টনারশিপ দলিলও তৈরি করেন তারা। আসামি ইকবাল হোসেন তার মালিকানাধীন ভূমিসহ চারতলা একটি ভবন বন্ধক রাখেন ব্যাংকের কাছে। ওই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রথমবার ৮ কোটি টাকা গ্রহণ করেন তারা। পরে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ওই হিসাবের একাধিকবার ঋণের লিমিট নবায়ন করে গত ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় থেকে ১৮ দশমিক ৫০ কোটি টাকায় ঋণের সুবিধা মঞ্জুর করা হয়।
এভাবে মো. তাজুল ইসলাম চেীধুরী, কাঞ্চন কুমার দে এবং সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রতারণা করে মো. আবদুস সবুর চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে, ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে কৌশলে ঋণের লিমিট বাড়ান। লোকাল ও ফরেন এলসি খুলে পরে এলটিআর ও পিএডিতে রূপান্তর দেখিয়ে ঋণের টাকা ডিসভার্সড করে ব্যাংকের মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৪০৬ টাকা আত্মসাৎ করেন তারা।
২০১৩ সালের দুই ব্যাংক কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্তের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় চাকরি থেকে অপসারণ করে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।
এমএ/ডিজে