ভাঙচুর করে ক্ষোভ উড়াল চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কর্মীরা (ভিডিও)
কেন্দ্রীয় নেতারা সভা ছাড়লেন তড়িঘড়ি
চট্টগ্রামে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে সভার ইতি টেনে সভাস্থল ছেড়ে গেলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা। হঠাৎ এই সংঘর্ষে হাতাহাতি ছাড়াও সভাস্থলে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) বিকেলে ৪ টায় সিআরবির রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, মূলত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে আলোচনা করতেই এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে।
জানা গেছে, আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি করে ওই কমিটি বাতিলের দাবি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ নেতা তালুকদার পারভেজ আনসারীর অনুসারীদের একটি মিছিল সভাস্থলে প্রবেশ করতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
সভায় উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে আলোচনা করতেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এতে দুই সদস্যের কমিটির পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন ইউনিট থেকে মিছিল আসছিল। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ বাদে তপু-রেজাউল কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ উল্লেখ করে এটি বাতিলের দাবিতে শ্লোগান দিয়ে একটি মিছিল সভাস্থলে ঢুকলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর করা হয় সভাস্থলে। পরে নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। উনারা দ্রুত সভা শেষ করে হোটেলে ফিরে যান।’
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম সুমন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ সম্পাদক মো. নেয়ামত উল্লাহ তপন।
সভায় সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হাসান চৌধুরী তপু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটা বড় সংগঠন। এসব অনুষ্ঠানে ছোটখাট সংঘর্ষ হয়।’
তবে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে শ্লোগান ঘিরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে— এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে এই প্রতিবেদককে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম সুমন বলেন, ‘ছোটখাট একটা ঝামেলা হয়েছে। আমরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এটাকে আর বাড়তে দিই নাই। বলা চলে প্রোগ্রাম মোটামুটি সফল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব দিয়েছেন। বলেছেন আপনারা সেখানে যান, পরিস্থিতি অবজার্ভ করেন, সেখানে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় করার ব্যবস্থা নেন। এই মিশন নিয়েই আমরা এসেছি। এখানে আমরা কিছু কিছু জায়গা গোছালো দেখছি, কিছু প্রবলেমও দেখছি। প্রবলেমগুলো সমাধান করে আমরা দ্রুত কমিটি দেওয়ার দিকে এগুবো।’
২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। তুমুল সংঘর্ষে সেই সম্মেলন পণ্ড হলে ৩ মাস পরে একই বছরের ৫ মে দুই সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া সেই আংশিক কমিটিতে সভাপতি পদে মিরসরাইয়ের তানভীর হোসেন চৌধুরী তপু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ফটিকছড়ির রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর গত ৪ বছরে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে এই দুই নেতা। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের কমিটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি অনুমোদনের জন্য দুই দফায় ঢাকা গেলেও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিটি অনুমোদন না দিয়েই তাদের ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামসহ শীর্ষ নেতাদের অনেককেই অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার কমিটি বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা আর বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এটা।’
এআরটি/সিপি