বড় দুই ব্র্যান্ডের লবণে মারাত্মক ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’, ক্যান্সারসহ হৃদরোগের অন্যতম কারণ

শাবিপ্রবিতে গবেষণার তথ্য প্রকাশ

বাজারে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে থাকা দুটি ব্র্যান্ডের খাবার লবণে মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। এই দুই ব্র্যান্ডের লবণের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র যেসব কণা পাওয়া গেছে, একটি নমুনায় ৮৮ শতাংশ ও আরেকটি নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে ৯০ শতাংশ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের খাবার লবণ নিয়ে গবেষণা করে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক দল গবেষক। তবে গবেষণানীতি অনুযায়ী বাজারে প্রচলিত ওই দুই ব্র্যান্ডের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক ও শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জিএম রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, খাবার লবণ নিয়ে গবেষণার পর সেখানে ‘মাইক্রোপ্লাস্টিকের’ সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই ধরনের খাবার লবণের মধ্যে Micro FTIR analzsis এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ডাটা থেকে দেখা যায়, Salt-1 নমুনায় প্রায় ৮৮% ও Salt-2 নমুনায় প্রায় ৯০% অতিক্ষুদ্র কণাই বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক। দুটো নমুনাতেই বিভিন্ন প্রকারের প্লাস্টিকের মধ্যে পলি এমাইড (ploz amaide) সর্বোচ্চ পরিমাণে পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক জিএম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দেশে গত ১০ বছরে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ‘Per Capita’ হিসেবে ২ কেজি থেকে বেড়ে সাড়ে ৩ কেজি হয়েছে। কিন্তু এসব প্লাস্টিক বর্জ্য যথাযথভাবে নির্গত করা হয় না বলে এর ফলাফলে ক্ষতিকর প্লাস্টিক সামুদ্রিক উৎস থেকে প্রাপ্ত খাবারে পাওয়া যাচ্ছে।’

শাবিপ্রবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক জাহিদ হাসান সৌরভ গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা গত বছরের শুরুর দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের দুটি খাবার লবণ নিয়ে গবেষণা শুরু করি। প্রায় এক বছর গবেষণা শেষে আমরা গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে এটি উপস্থাপন করলে আমাদের গবেষণাটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই গবেষণায় ‘খাবার লবণে মাইক্রো প্লাস্টিক’ গবেষণাটি উপস্থাপন করায় কর্তৃপক্ষ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন।’

‘মাইক্রো প্লাস্টিকের’ ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক টুথপেস্ট, ক্রিম থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের মধ্যে ব্যবহার হয়। এটি পানির সঙ্গে মিশে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে ক্যান্সার, কার্ডিয়াক ডিজিজসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।’

তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণেই মুলত আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে (Food chain) ধীরে ধীরে এসব প্লাস্টিক ঢুকে পড়ছে। এর ফলে ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি উপাদান।’

গবেষক দলের সদস্য ও এফইটি বিভাগে স্নাতককোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আমজাদ পাটোয়ারী জানান, এই গবেষণার জন্য গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ‘বেস্ট স্পিকার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!