ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুগ্রুপের মধ্যে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া ঢাকায় ফেরার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা তকদীর হোসেন মো. জসীমের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকেও রক্তাক্ত করা হয়েছে। ঘটনার পর তাকে ওদিন রাতে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬৬ ধারা জারি করে প্রশাসন। তবে উপজেলা বিএনপি ১৪৪ ধারার মধ্যে একটি গ্রামে সম্মেলন সম্পন্ন করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে বাঞ্ছারামপুর এসএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল (সম্মেলন) ডাকা হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে প্রধান অতিথি করে এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও করা হয়। কিন্তু সম্মেলনের আগে একই স্থানে উপজেলা বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএ খালেকের অনুসারীরা ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভার আহ্বান করেন। এ নিয়ে বিএনপির বিবদমান দুগ্রুপে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়।
দুপক্ষের উত্তেজনার একপর্যায়ে গত ১৮ নভেম্বর দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় এবং বেশকিছু দোকানপাট ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে সংঘর্ষের পরও বিক্ষুব্ধ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী লাকী ও সদস্য সচিব একেএম ভিপি মুসা ২০ নভেম্বর যে কোন মূল্যে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে সাবেক সাংসদ এম এ খালেকের অনুসারীরা সম্মেলন যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৪৪ ধারা জারির কারণে কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতা মেহেদী হাসান পলাশের গ্রাম রাধানগরের জামিয়া মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রতিপক্ষের বিক্ষোভ ও বিরোধীতার মুখে ২০ নভেম্বর সম্মেলন সম্পন্ন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ফরিদ। তবে সম্মেলনে রুহুল আমীন রিজভী না আসায় প্রধান অতিথি করা হয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়াকে। প্রধান বক্তা ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম ভিপি মুসার সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া, রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।
সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশকে সভাপতি এবং বর্তমান সদস্য সচিব এ কে এম. মুসাকে সাধারণ সম্পাদক ও সেলিম মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে উপজেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সম্মেলন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে অতর্কিত হামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদীর হোসেন মোহাম্মদ জসীম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাতেই ঢাকায় নিয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত বিএনপি নেতা জসীমের রক্তাক্ত ছবি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ হামলার ঘটনায় সাবেক সাংসদ এমএ খালেকের সমর্থকদের দোষী করে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতা জসীম ভাইয়ের ওপর বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাই ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দেখতে চাই।
অভিযোগ অস্বীকার এম এ খালেক করে বলেন, বুধবার আমি ঢাকায় ছিলাম। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতার ওপর হামলার আমিও তীব্র নিন্দা জানাই ও দোষীদের বিচার দাবি করছি। তবে এ সম্মেলন একটি পরিকল্পিত পাতানো সম্মেলন। জেলার নেতারা তাদের ইচ্ছামতো তৈরি-এমন হাস্যকর সম্মেলনের ঘোষিত কমিটি আমরা মানি না। বিএনপির ৯০ শতাংশ নেতাকর্মী আমার সাথে আছে।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন,৫ আগস্টের পর যারা পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে পুনর্বাসিত করতে বিএনপি সেজে এখন নানা গীত গাইছে তারাই এই সম্মেলনকে নিয়ে নানা আবোল-তাবোল বকছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্ত্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের উপস্থিতিতিতে সব বিধি-বিধান মেনেই সম্মেলন সম্পন্ন করে তিন সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সম্মেলন নিয়ে যারা জঘণ্য হামলা করে কেন্দ্রীয় নেতাকে রক্তাক্ত করতে পারে তাদের স্থান বিএনপিতে হবে না। পুরো ঘটনা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে আমি লিখিতভাবে শিগগির জানাবো। বিএনপির ইমেজকে ক্ষুন্ন হতে আমরা কোনভাবেই দিবো না।