ব্যাট হাতে কিশোরে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নে ‘বুড়োদের’ চিটাগাং মাস্টার্স

কারো বয়স পঞ্চাশ ছুইঁ ছুইঁ, কারো চল্লিশ। কেউ আছেন আইনি পেশায়, কারো পেশা ব্যাংকার আবার কেউবা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট কোচিংকে। তবে জীবিকার তাগিদে ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষগুলোর পরিচয় একটাই- তারা সবাই সাবেক ক্রিকেটার।

এরকমই পাঁচমেশালি পেশার লোকজন নিয়ে চট্টগ্রামে গড়ে উঠা ক্লাবের নাম ‘চিটাগাং মাস্টার্স’। বুড়োদের নিয়ে গঠিত এই ক্লাবের শুরুটা হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। শুরুর সময়ে মাত্র সদস্য ছিল ১২ জন, দেড় বছর পরে এসে ২০২০ সালের শুরুতে সদস্য সংখ্যা হয়েছে ত্রিশ জন।

জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আর সম্ভব হয় না মাঠের ক্রিকেটে সময় দেওয়া। জীবন-জীবিকার তাড়নায় বয়স পেরিয়ে গেলে হারিয়ে যায় ক্রিকেট। তাই বাঙালীর প্রাণেমেশা ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে যাত্রা শুরু হয় সংগঠনটির। তবে সংগঠনের সদস্যদের হতে হলে দু’টি শর্ত পূর্ণ হতে হবে। প্রথমত হতে হবে চট্টগ্রামের সাবেক ক্রিকেটার দ্বিতীয়ত বয়স হতে হবে ত্রিশের বেশি। নিজেদের সংগঠন সম্পর্কে এমনটাই জানালেন ক্লাবটির উদ্যোক্তা- নাঈম, ওয়াজী ও রাশেদ। অবশ্য এসব কারণে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে ‘বুড়োদের ক্লাব’ হিসেবে বিশেষ তকমাও পেয়েছে এই ক্লাব।

ক্লাবের সহ সভাপতি বর্তমানে ক্রিকেট কোচ মর্তুজা রায়হান মিঠু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘শুধু মাত্র মনের খোড়াক মেটাতেই ক্রিকেটকে ঘিরে এমন আয়োজন ক্লাবটির। পথ চলার প্রায় দু বছরে দেশে ও দেশের বাইরে অংশ নিয়েছে দু’টি টুর্নামেন্টে। বুকে স্লোগান ধারণ করে নিয়েছে- প্লে ক্রিকেট, সি দ্যা ওয়ার্ল্ড -মেইক্স ফ্রেন্ডস্।’ নিজেদের আয়োজিত আনুষ্ঠানিক টুর্নামেন্ট ছাড়াও প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার কিংবা সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে কর্পোরেট ক্লাব পেনিনসুলা, ক্যান পার্ক, শ্রীলংকান অ্যাসোশিয়েশন, চিটাগাং আম্পায়ার্স ও স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন কিংবা হাটহাজারী লিজেন্ডের অন্য ‘বুড়োদের’ ক্লাবগুলোর সাথে আয়োজিত হয় প্রীতি ম্যাচ।

বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট ইন্দোবাংলা ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ২০১৯ সালে সংগঠনটির সদস্যরা পাড়ি জমিয়েছিল ভারতের শিলাগুড়িতে। সেখানে ভারতীয় বুড়োদের ক্লাব আলীপুরদোয়া এক্স প্লেয়ার্স, কুচবিহার এক্স প্লেয়ার্স, ফালা কাটা এক্সপ্লেয়ার্সদের সাথে হয়েছিল টুর্নামেন্টের আয়োজন। প্রস্ততি নিচ্ছেন চলতি বছর আবারও ওই টুর্নামেন্টে যোগ দিতে ভারত যাওয়ার।

তবে নিজেদের অর্থায়নে দেশ-বিদেশ চষে বেড়ানো সংগঠনটির সদস্যরা হতাশ মাঠ সংকটের কারণে বিদেশি বুড়ো বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে না পারায়। সংগঠনটির সভাপতি মো. রাশেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘বিভিন্ন সময় আমাদের ভারতীয় বন্ধুরা ওদের দেশে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের অর্থায়নেই সেখানে খেলতে যায়। কিন্তু মাঠ সংকটের কারণে এ দেশে তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারি না’।

মাঠ সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় হারিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেট। তাই প্রবীণ ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন আয়োজন। তবে পাশাপাশি তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের সংগঠনের অর্থায়নে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানায় সংগঠনটি। পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে চান বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডেও। বিশেষকরে সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানালেন চিটাগাং মাস্টার্সের সভাপতি মো. রাশেদ।

মর্তুজা রায়হান মিঠু জানান, ‘চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে অপেশাদার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করতে ইতিমধ্যে বন্দর স্টেডিয়ামে অনুমতি চেয়েছি। যদি অনুমতি পাই বয়স্কদের (৩০ বছরের উর্ধ্বে) ৬টি দল নিয়ে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টের আয়োজন করবো।’

এএ/এই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!