অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের আবহাওয়ায় গত দুইদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা একই সাথে হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি থাকলেও দুপুর নাগাদ আকাশ থমথমে। গুমোট ভাব। বাতাসের উষ্ণতাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে বুলবুল গতিপথ পরিবর্তন করে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। উপকূলীয় এলাকায় বেড়েছে ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) যেখানে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১০০-১২০ কিলোমিটার, এখন তা বেড়ে ১৩০-১৫০ কিলোমিটার। এই গতি অব্যাহত থাকলে শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা উপকূলের সুন্দরবন দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে ‘বাংলাদেশ বুলবুলের তান্ডবলীলার শিকার’ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে— ঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ ও উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামে সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে একই সাথে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে সংকেত আরও বেড়ে যাবার ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ ড. শহীদুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন যে গতি তাতে ঝড়টি বাংলাদেশের দিকে ক্রমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছে। গতিবেগ আগের চেয়ে বেশি। ঝড়টি এখন যে গতিতে আসছে, তাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবন দিয়ে ঝড় প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি বুলবুল দুর্বল না হয় তবে এর তাণ্ডবের শিকার হতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া, ঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে দুপুর থেকে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে চট্টগ্রামের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও কিছুটা গুমোট ভাব ধরে আছে।’
আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে। কক্সবাজার থেকে ৪৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার আকারে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
‘বুলবুল’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এছাড়া এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহা বিপদ সংকেত, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এসআর/এসএস