চট্টগ্রামের ৭ স্পটে বুদ্ধিমান ক্যামেরা, বেশি বসবে আন্দরকিল্লা-উত্তর আগ্রাবাদে
চট্টগ্রামসহ ১০ সিটি করপোরেশনে ১৪৫০ ক্যামেরা বসবে
নির্বাচনী সহিংসতা ও অপরাধীদের রুখতে চট্টগ্রামসহ দেশের ১০টি সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বসছে বিশেষায়িত ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’। এসব ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, চেহারা চিহ্নিতকরণ, গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তিসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা। রাতে কোনো অপরাধ ঘটলে সহজেই অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবে পুলিশ ও র্যাব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, খুলনা সিটি করপোরেশন, সিলেট সিটি করপোরেশন, বরিশাল বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে এই ক্যামেরাগুলো লাগানো হবে। লাগানো ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ দেখে তাৎক্ষণিক সেন্ট্রাল ডেস্কের কর্মকর্তারা থানা ও টহল পুলিশকে অবহিত করবেন। পরে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ পাহাড়তলী, উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা হালিশহর, আন্দরকিল্লা, উত্তর আগ্রাবাদ ও পূর্ব ষোলশহর এলাকায় ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা’ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে আন্দরকিল্লা ও উত্তর আগ্রাবাদ এলাকায় বেশি করে ক্যামেরা লাগানো হবে বলে জানা গেছে।
পুলিশের টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্যোগে এই ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো নিজ নিজ মহানগরীর সেন্টাল ডেস্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বিশেষ করে ক্যামেরাগুলো মহানগরীর প্রবেশপথে বেশি করে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে যে কোনো যানবাহনের প্লেটের নম্বর ও ব্যক্তির চেহারা দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং স্পষ্ট বোঝা যায়। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীসহ ১০টি শহরের মূল পয়েন্ট, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সংগঠনের আশপাশে লাগানো হবে।
জানা গেছে, উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরাগুলো স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। গভীর রাতেও নির্জন রাস্তা থাকবে ক্যামেরার নজরদারিতে। ক্যামেরায় চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি থাকায় অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের সহজেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো কোনো ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় শব্দ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা। কোথাও কোনো শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে শব্দের বিস্তারিত তথ্যসহ কন্ট্রোলরুমে সিগন্যাল চলে যাবে। কোনো স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ে তথ্য পেয়ে যাবে পুলিশ। এমনকি কত দূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি, তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সংকেত বেজে উঠবে। ক্যামেরাগুলো এমন স্থানে বসানো হবে কেউ বুঝতেই পারবে না সেখানে কোনো কিছু আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সেগুলো মনিটরিং করা হবে। রাতে ক্যামেরার ফুটেজগুলো খুবই ফর্সা দেখা যাবে। ফলে অপরাধীরা সহজেই ধরা পড়বে।
আগামী ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রযুক্তি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমেরিকা বা জাপান থেকে ক্যামেরাগুলো আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সব দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজশাহীর প্রবেশদ্বার কাঁটাখালী, শিরোইল, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রেলগেট, নিউ মার্কেট এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণের ক্যামেরা লাগানো হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রবেশদ্বার নাওজোড় ও টঙ্গিতে পর্যাপ্ত পরিমাণের ক্যামেরা লাগানো হবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রবেশদ্বার সাইনবোর্ড এলাকা, নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা সড়ক, ধনুহাজী রোড, শহরের ২ নম্বর গেট, রেলী বাগান এলাকায় বসানো হবে ক্যামেরা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভিক্টোরিয়া কলেজ বজ্রপুর দক্ষিণ চর্থা, কোটবাড়ির মূল সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোড, গোধির পুকুরপাড় এলাকায় লাগানো হবে ক্যামেরা। খুলনা সিটি করপোরেশনের আড়ংহাটা, হরিণটানা ও সোনাডাঙ্গার মূল সড়কে লাগানো হবে সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়াও খুলনা কলেজের মূল সড়কে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিমানবন্দর রোড, কোতোয়ালি বাজার রোড ও জালালাবাদের সড়কে লাগানো হবে সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়াও বরিশাল সিটি করপোরেশনের অশ্বিনীকুমার টাউন হল, ভাটিখানা, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় লাগানো হবে সিসি ক্যামেরা। এসব এলাকায় একাধিক ক্যামেরা থাকলেও অনেক ক্যামেরা অচল রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ জোনে পুলিশের উদ্যোগে লাগানো হবে সিসি ক্যামেরা।
সিপি