সাজন খুন/ বুকে ছুরি মারেন মেয়ের জামাই আকবর, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী নারী
পুলিশকে মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়ায় ছুরি মারেন মারুফাকেও
চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় আলোচিত সাজন খুনের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনাস্থলে থাকা এক নারীর জানিয়েছেন, মেয়ের জামাইয়ের ছুরির আঘাতে খুন হন সাজন।
এদিকে নিহতের স্ত্রী করা মামলায় আসামির তালিকায় খুনির নাম নেই। উল্টো প্রত্যক্ষদর্শী নারীকে মিথ্যা সাক্ষী দিতে চাপ দেয়। তাদের কথা না শোনায় ঘর থেকে বের করে তাকে ছুরি মারা হয়, মারধর করা হয় তার মেয়েকেও।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর নাম মারুফা। ঘটনার দিন পাশের একটি দোকানে ছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখতে পান, সাজনের গ্যারেজের সামনে একটি দোকানে তুমুল হট্টগোল। মুহূর্তেই সেটি সেটি রূপ নেয় সংঘর্ষে।
মারুফা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমি দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে জানতে পারি, দই-চিড়া বেচাকেনা নিয়ে দোকানদারের সঙ্গে এক বয়স্ক ব্যক্তির কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পর দোকানদারের পক্ষ এবং ওই বয়স্ক লোকের পক্ষের লোকজন জড়ো হয়, শুরু হয় সংঘর্ষ।
মারুফা বলেন, তখন ঘটনাটি থামাতে এবং মীমাংসা করতে এগিয়ে আসেন সাজন। এমন সময় সাজনের মেয়ের জামাই আকবর ছুরি হাতে সেখানে আসে। একপর্যায়ে আকবর, সাজিদ নামে এক ছেলেকে ছুরি মারতে যায় আকবর। এ সময় সাজিদকে বাঁচাতে দৌড় দেন সাজন। দৌড়ে গিয়ে সাজন, সাজিদকে সরিয়ে দিলেও আকবরের চালানো ছুরি লাগে সাজনের গায়ে।
তিনি বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে সাজনকে ধরি। নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে তার বুক চেপে ধরি, রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করি। কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী আসেন, আমরা দুজন মিলে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। যাওয়ার পথে সাজন বলছিলেন— ‘আমারে শেষ করছে আকবর, আমি আর বাঁচব না।’ পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়ার পর সাজনকে বেঁচে নেই বলে জানান, ডাক্তার।
মিথ্যা স্বাক্ষী না দেওয়ায় খুনির পক্ষ হামলা করে জানিয়েছে তিনি বলেন, ঘটনার বিপরীতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাপ দেন নিহত সাজনের মেয়ের জামাই আকবর ও তার বাবা ইউসুপ। প্রথমে ভয় পেয়ে চুপ থাকলেও পরে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হইনি। এ কারণে আকবর ও তার সহযোগীরা আমাকে এবং আমার মেয়েকে হামলা করে। আকবর ও তার লোকজন আমার ঘরে ঢুকে প্রথমে আমার মেয়েকে মারধর করে। পরে আমাকে টেনে রাস্তায় এনে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে। আমার কাছে এ ঘটনার পর চিকিৎসার মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে।
চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার শান্তিনগর বগারবিলে, দইচিড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির ঘটনার জেরে খুন হন নিরাপরাধ সাজন। ঘটনার পরপরই বাকলিয়া থানায় খুনের মামলা করেন সাজনের স্ত্রী হেলেনা। কিন্তু সে মামলায় যাদের আসামি করা হয়, তারা কেউই সাজনের খুনি নন। আসল অপরাধী স্বজনদের মধ্যে লুকিয়ে, পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে পুলিশের খাতায় নেই আকবরের নাম। এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে সেই খুনি।
বাকলিয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, এই খুনের ঘটনায় আমরাও ভিন্ন কিছু তথ্য পেয়েছি, তদারকি চলছে। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।



