বিস্কুট-মুড়ির চালানের আড়ালে টাকা পাচারের চেষ্টা করে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা
১১ টন পণ্য রপ্তানির কথা বলে নেওয়া হচ্ছিল মাত্র আধা টন
মালয়েশিয়ায় বিস্কুট-মুড়ির চালান রপ্তানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের চেষ্টা করায় চট্টগ্রামে এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৩ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্যপণ্য বা বিস্কুট-মুড়ির দুটি পণ্যচালান রপ্তানির আড়ালে মানিলন্ডারিংয়ের চেষ্টার অপরাধে ওই জরিমানা গুণতে হল নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ছোট কৃষ্ণদি লিমিটেডকে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, রফতানির আড়ালে মানিলন্ডারিং, কালো টাকা সাদা করার কৌশল ও সরকারের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে নগদ প্রণোদনা গ্রহণের অপচেষ্টা করায় ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হল ছোট কৃষ্ণদি লিমিটেডকে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় অবস্থিত বেসরকারি ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে দুটি চালানের দুই কনটেইনার খাদ্যপণ্য আটক করা হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের প্রতিষ্ঠান ছোট কৃষ্ণদি মালয়েশিয়ায় ১ লাখ ৩ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের বিস্কুট-মুড়ি ও শুষ্ক খাবারের ওই দুটি পণ্যচালান রপ্তানির ঘোষণা দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার ৮১৭/১ গোসাইলডাঙ্গার জাফর ম্যানশনের ঠিকানার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আর ইসলাম এজেন্সিকে মনোনয়ন দেয় ছোট কৃষ্ণদি লিমিটেড। সিঅ্যান্ডএফের প্রতিনিধি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ২১ ডিসেম্বর বিল অব এক্সপোর্ট (নম্বর-সি-১৭৭৬৮৮৮) এবং ১৮ ডিসেম্বর ( সি-১৭৬১৯৭৭) দাখিল করেন।
উত্তর পতেঙ্গার বেসরকারি ইস্টার্ন লজিস্টিকস ডিপোতে দুটি পণ্যচালানের বিপরীতে দুটি ২০ ফুট কনটেইনারে পণ্য বোঝাই করা হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে তোলার ডাক আসার অপেক্ষায় ডিপোতে কনটেইনার দুটি রাখা হয়। প্রতি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই— গোপনে এমন খবর আসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারের কাছে।
কমিশনারের নির্দেশে কনটেইনার দুটি খুঁজে বের করে কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন ও রিসার্চ টিম (এআইআর) এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, সংশ্লিষ্ট ডিপো ও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কনটেইনারের সিল কেটে পণ্য পরীক্ষা করেন ওই শাখার কর্মকর্তারা। কনটেইনারের সামনে সুসজ্জিত মুড়ি, ড্রাই কেক টোস্টের কার্টন সরিয়ে দেখা যায় পেছনে ফাঁকা এবং প্রতি কনটেইনারে প্রায় ১১ টন পণ্য থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যায় আধা টন বা ৫০০ কেজি পণ্য।
চট্টগ্রাম কাস্টমস জানায়, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কালো টাকা পাচার করে রপ্তানির নামে টাকা সাদা করার অপচেষ্টা করা হয়েছে এতে। তাছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে খাদ্যসামগ্রী রফতানির ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা দেয় বাংলাদেশ সরকার। মানি লন্ডারিং, রপ্তানির আড়ালে কালো টাকা সাদা করা, অবৈধভাবে সরকারি প্রণোদনা গ্রহণের অপচেষ্টাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছে চোরাচালানি চক্রটি।
এ ঘটনার পর কাস্টমস আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একই সাথে কাস্টম হাউসের এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিট কাজ শুরু করে।
এদিকে দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানির পর সম্প্রতি ৩৫ লাখ জরিমানা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এর আগে একই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ঢাকার মতিঝিলের সার্কুলার রোডের ঠিকানার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডকেও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
সিপি